পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং করোনার সনদপত্র ছাড়াই অবাধে প্রবেশ করছে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে ভারতীয় পণ্য বাহী ট্রাক ও চালক-হেলপাররা। প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগী, আতঙ্কে এলাকাবাসী। আমদানি-রপ্তানিসহ পোর্ট বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বন্দরবাসীর।
এদিকে পানামা পোর্ট কর্তৃপক্ষ ১৪ দিন ভারত থেকে আমদানি-রপ্তানিসহ বন্দরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত চিঠি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সকালে হিলি হাসপাতাল ও বন্দর ঘুরে জানা যায়, সোমবার থেকে বুধবার তিন দিনে ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে হিলিতে, এর মধ্যে ৮ জনই বন্দরকর্মী। এছাড়া চলতি দেড় সপ্তাহে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ২১ জন। আর এনিয়ে বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, ভারতীয় পণ্য বাহী ট্রাকই নিয়ে আসছে এই বন্দরে করোনা ভাইরাস। আর তা নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন জনের ফেসবুক পেজে করোনার আতঙ্ক এবং ভারতীয় পণ্য বাহী ট্রাকগুলোতে আসছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। এমনটিই বলে স্ট্যাটাষ্ট দিচ্ছেন অনেকেই।
বন্দর অভ্যন্তরে ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় চালক-হেলপাররা অনায়াসে পোর্টের শ্রমিক, কর্মচারীদের সাথে মিশে যাচ্ছে। ভিতরে অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। আর যার কারণে তারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে।
কয়েক দিন আগেও হিলি পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত পৌরসভার সকল কাউন্সিলর এবং করোনাকালীন সংগঠন নিয়ে চেকপোস্টে ভারতীয় পণ্য বাহী ট্রাক প্রবেশে বাঁধা দিয়ে দেন। পরে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা আশ্বস্ত করে ছিলেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে করোনার নেগেটিভ সনদপত্র নিয়ে চালক এবং হেলপাররা বন্দরে প্রবেশ করবে। আজ পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়া হয়নি শুরু ।
হিলি পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, আমি জনপ্রতিনিধি, জনগণের সার্বিক সুবিধা অসুবিধা আমাকেই দেখতে হবে। পৌরবাসী কথা ভেবে এর আগে আমি চেকপোস্টে প্রায় সোয়া ঘন্টা ভারত থেকে পণ্য বাহী ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম। কেন না ভারতীয় চালক-হেলপাররা কোন করোনার নেগেটিভ সনদপত্র ছাড়ায় বন্দরে প্রবেশ করছে।
তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ীরা সময় নিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা যদি এই কার্যক্রম চালু না করে তাহলে আমরা হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিবো। গত তিন দিনে ১১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা হিলি স্থলবন্দরের অভ্যন্তরীণ ৮ জন । আমি ডিসি মহোদয়ের নিকট হিলির করোনায় সার্বিক অবস্থা জানাচ্ছি এবং কিছু দিনের জন্য পোর্ট বন্ধ রাখার জন্য বলেছি।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কারক গ্রুপের সভাপতি ও হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশীদ হারুন জানান,দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা ১৫ দিনের সময় নিয়েছেন।প্রায় ৮ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। বাঁকি দিনের মধ্যে তারা যদি প্রক্রিয়া শুরু না করে তাহলে ভারতীয় পণ্য বাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে হিলি পানামা পোর্ট লিংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত কুমার চক্রবর্তী (নেপাল) জানান, বর্তমান পোর্ট ঝুঁকি পূর্ণ, পোর্টের ভিতরে ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। আমি ১৪ দিনের জন্য বন্দরে কঠোর লকডাউন চাচ্ছি। এছাড়াও ভারত থেকে সকল প্রকার আমদানি-রপ্তানি বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত চিঠি দিয়েছি।
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ আলম জানান,হিলিতে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পোর্ট বন্ধের বিষয়ে গত ৩০ মে জেলা প্রশাসকের সাথে জুম মিটিং এ অবগত করা হয়েছে। উপর থেকে নির্দেশ আসলে এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নদী বন্দর / এমকে