প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, জাতীয় আইন, নীতি-আদেশ কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের করা গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ ২০২০ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের নানা কার্যক্রমে ‘সুশাসনের অগ্রগতি ও ঘাটতি’ বিষয়ে গবেষণা করে টিআইবি। এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চারটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে একটা হিসাব করা সম্ভব হয়েছে। মোট অর্থের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১০২ কোটি টাকা, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে ২০০ কোটি টাকার মতো। দুর্নীতির কারণে চারটি প্রকল্পে ক্ষতির পরিমাণ ১৯১ কোটি টাকা। এই ৪টি প্রকল্প হলো পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, বরগুনা ও পটুয়াখালীতে পোল্ডার নির্মাণ প্রকল্প, মনু নদী সেচ ও পাম্পহাউস পুনর্বাসন, খুলনার কয়রায় বাঁধ সংস্কার প্রকল্প।
নির্বাহী পরিচালক বলেন, জাতীয় আয়ের ২ দশমিক ২ শতাংশের মতো ক্ষতি হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে নিতে পারলে জাতীয় আয়ের বিশাল যে ক্ষতি, এটা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নেওয়াজুল মওলা ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা’ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে দুর্যোগ সাড়াদান কার্যক্রমে ‘সুশাসনের চ্যালেঞ্জগুলো’ চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে এ গবেষণায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, জাতীয় আইন, নীতি এবং আদেশের প্রতিপালনে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি, সতর্কবার্তা প্রচারে আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়হীনতা, প্রচার পদ্ধতির আধুনিকায়ন না করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ জরুরি সতর্কবার্তা প্রচারের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ানো।
এ ছাড়া দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি, ত্রাণ বিতরণ ও তদারকিসংক্রান্ত তথ্যের প্রতিবেদন প্রকাশ না করা; ত্রাণসংক্রান্ত তথ্য ও সুবিধাভোগীর তালিকা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে প্রকাশ না করা এবং ত্রাণ বরাদ্দ, বিতরণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে অনিয়ম এবং কার্যকর তদারকি ও অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থার ঘাটতি আছে বলে মনে করে টিআইবি।
জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকা, যথাযথভাবে ত্রাণের চাহিদা নিরূপণ ও স্থানীয়ভাবে ত্রাণ মজুতসহ জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় ঘাটতি, জরুরি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং স্যানিটেশনসহ দুর্গত জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে ঘাটতি, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কথাও প্রতিবেদনে উঠে আসে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতাসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কার্যক্রমে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অপচয় বন্ধে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রকাশিত অনিয়ম-দুর্নীতির স্বচ্ছ তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে বলেও জানায় সংস্থাটি।
নদী বন্দর / পিকে