নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র। খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক হয়ে গেলেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার তিনটি শট ঠেকিয়ে দিলেন তিনি। সে সঙ্গে ৩-২ গোলে কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে গেলো লিওনেল মেসির দল। ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হলো আর্জেন্টিনা।
৯০ মিনিটের খেলা শেষে আর্জেন্টিনা এবং কলম্বিয়ার মধ্যে খেলার ফল নিষ্পত্তি না হয়নি। যার ফলে ফাইনালের দল নির্ধারণে খেলা গড়াল টাইব্র্রেকারে। কোপা আমেরিকার নিয়ম অনুসারে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা হওয়ার নিয়ম নেই। ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হলো সরাসরি টাইব্রেকার।
টাইব্রেকারে কলম্বিয়া প্রথম শট নেন কুয়াদ্রাদো। ঠেকাতে পারেননি মার্টিনেজ, গোল। ১-০। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শট নেন মেসি, দুর্দান্ত শট। চোখের পলকে এটাও গোল। ১-১।
কলম্বিয়ার দ্বিতীয় শট নিতে আসেন ডেভিনসন সানচেজ। বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে সানজের শট ফিরিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক মার্টিনেজ। গোল হলো না। ১-১। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় শট নিতে আসেন রদ্রিগো ডি’পল। খুবেই বাজে শট। বারের ওপর দিয়ে মেরে দিলেন তিনি। গোল হলো না। ১-১।
কলম্বিয়ার তৃতীয় শট নিলেন, ইয়েরি মিনা। আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ে মিনার শট ফিরিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। গোল হলো না। ১-১। আর্জেন্টিনা তৃতীয় শট নিলেন লিয়ান্দ্রো পেরেডেস। ডেভিড ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ফেরাতে পারলেন না। গোল। ১-২।
কলম্বিয়ার চতুর্থ শট নিতে আসেন মিগুয়েল বোরজা। এটি ঠেকাতে পারলেন না মার্টিনেজ। গোল। ২-২। আর্জেন্টিনা চতুর্থ শট নেন লওতারো মার্টিনেজ, এটিও গোল হয়ে গেলো। ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি। ২-৩।
এবার নিজেদের শেষ শট নিতে আসেন কলম্বিয়ার ১০ নম্বর জার্সিধারী ফুটবলার এডউইন করডোনা। তার দুর্বল শটটিও ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। শট ঠেকিয়েই জয়ের আনন্দে দৌড় দিলেন মার্টিনেজ।
এর আগে মোট ১৫টি ম্যাচে টাইব্রেকারে যায় আর্জেন্টিনার ম্যাচ। এর মধ্যে ৯টিতে জয় পায় লা আলবেসেলেস্তারা। কলম্বিয়া টাইব্রেকারে খেলে ৯টি ম্যাচে। জয় পেয়েছে ৫টিতে। আর আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার মধ্যে টাইব্রেকার হয় দু’বার। ১৯৯৩ এবং ২০১৫ সালে। দুবারই জিতেছে আর্জেন্টিনা। এবার নিয়ে জিতলো তৃতীয়বার। কলম্বিয়া কোয়ার্টার ফাইনালেও টাইব্রেকারে উরুগুয়েকে হারিয়ে উঠে আসে সেমিফাইনালে।
প্রথমার্ধের শুরুতে গোল পেলেও স্রেফ সৌভাগ্যের কারণেই পরপর দু’বার বেঁচে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। দু’বারই বল সাইডবার কিংবা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে এসে আর কলম্বিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ৬১ মিনিটেই গোল হজম করে বসে তারা।
এর আগে প্রথমার্ধের শুরুতেই মেসির পাস থেকে গোল করে ফেললেন লওতারো মার্টিনেজ। এই ১-০ গোলেই প্রথমার্ধ শেষ করলো লিওনেল মেসি অ্যান্ড কোং।
মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে গোল পেয়ে গেলে প্রতিপক্ষের মনোবলে অনেক বড় চিড় ধরানো সম্ভব। ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সে কাজটাই সেরে নিলেন লিওনেল মেসিরা। কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ৭ম মিনিটেই গোল আদায় করে নেয় আর্জেন্টিনা।
কলম্বিয়ার ডিফেন্সিভ হাফ থেকে ডি বক্সের মধ্যে বল পেয়ে যান মেসি। দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তিনি কাট ব্যাক পাস দেন এগিয়ে আসা লওতারো মার্টিনেজের উদ্দেশ্যে। বক্সের মাঝামাঝি বল পেয়ে ডান পায়ের দুর্দান্ত এক শটে কলম্বিয়ার জাল কাঁপিয়ে দেন মার্টিনেজ। ১-০ গোলে এগিয়ে গেলো আর্জেন্টিনা।
তবে আর্জেন্টিনা গোল করে এগিয়ে গেলেও সৌভাগ্য তাদের বলতেই হবে। নিশ্চিতভাবেই দুর্ভাগ্য কলম্বিয়ার জন্য। ৩৬ ও ৩৮ মিনিটে পরপর দু’বার কলম্বিয়ার নেয়া শট এবং হেড সাইডবার এবং ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। একটু এদিক সেদিক হলেই বল প্রবেশ করতো আর্জেন্টিনার জালে।
প্রথমে উইলমার ব্যারিওসের একটি মাটি কামড়ানো শট একেবারে সাইডবার ঘেঁষে চলে যায় বাইরে। আর্জেন্টিনার এক ডিফেন্ডারের গায়ে লাগার কারণে কর্ণার কিক পেয়ে যায় কলম্বিয়া। ৩৮তম মিনিটে সেই কর্নার কিক নেন কুয়াদ্রাদো। তার শট থেকে ভেসে আসা বল লাফিয়ে উঠে হেড নেন ইয়েরি মিনা। কিন্তু এবারও সেই বলটি পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
৪৪ মিনিটে মেসির কর্ণার থেকে হেডে গোল করার চেষ্টা করেন গঞ্জালেজ। কিন্ত গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনার অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেওয়া হয়নি আর্জেন্টিনার।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ফুটবল খেলতে শুরু করে কলম্বিয়া। তারা মরিয়া হয়ে ওঠে গোল শোধ করার জন্য। বিশেষ করে কুয়াদ্রাদো এবং লুইজ দিয়াজ বারবার বিপজ্জনক জায়গায় উঠে আসছিলেন। ৪৮ মিনিটেই আর্জেন্টিনার গোলমুখে শট নেন লুইজ দিয়াজ। সেটি প্রতিহত করেন মার্টিনেজ।
৫৭ মিনিটে কলম্বিয়ার গোলমুখে ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। শট নেন মেসি। তবে এবার তার শট চলে যায় বাইরে। তবে আক্রমণের ধার বাড়িয়েই যেতে থাকে কলম্বিয়া। যার ধারাবাহিকতায় ৬১ মিনিটে গোলের দেখা পায় কলম্বিয়া।
অবিশ্বাস্য একটি গোল করলেন লুইজ দিয়াজ। এডউইন কারদোনার পাস থেকে বল ধরে গোল পোস্টের বাম পাশে নিয়ে আসেন তিনি। আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার পেজেল্লা সঙ্গে থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। গোলরক্ষক মার্টিনেজের ওপর দিয়ে আলতো টোকায় আর্জেন্টিনার জালে বল জড়িয়ে দেন দিয়াজ।
৬৭ মিনিটে ডি মারিয়াকে মাঠে নামান আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। তাতে আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধার বাড়ে। ৬৮ মিনিটে গোলের চেষ্টা করে কলম্বিয়া। কুয়াদ্রাদোর ফ্রি-কিক থেকে ভেসে আসা বল আর্জেন্টিনার জালে জড়ানোর চেষ্টা করেন সানচেজ। যদিও সেই বলটি অনায়াসে সেভ করেন গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
৭৪ মিনিটে অবিশ্বাস্য একটি গোল থেকে বঞ্চিত হলেন ডি মারিয়া। মাঠে নামার কিছুক্ষণ পরই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় ৭৪তম মিনিটে কলম্বিয়ার গোলমুখে, ৩০ গজ দুরে বল পেয়ে যান ডি মারিয়া। বল ঠেকাতে বক্সের বাইরে বেরিয়ে আসেন গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা। তাকে কাটিয়ে সামনে একেবারে ফাঁকা পেয়ে যান ডি মারিয়া।
কিন্তু মুহূর্তেই দু’জন ডিফেন্ডার চলে আসায় গোলে শট নিতে পারেননি ডি মারিয়া। বক্সে ঢুকে তিনি পাস দেন লওতারো মার্টিনেজকে। কিন্তু ততক্ষণে গোলরক্ষকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে যান ডিফেন্ডার উইলমার ব্যরিওস। গোললাইনে দাঁড়িয়ে তিনি মার্টিনেজের শট ঠেকিয়ে দেন।
৮২তম মিনিটে নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হন মেসি। ডি মারিয়ার পাস থেকে বল ধরে বক্সের বাম কোন থেকে শট নেন মেসি। কিন্তু বলটি সাইড বারে লেগে প্রতিহত হয়।
নির্ধারিত সময়ে ১-১ ড্র, নিষ্পত্তি না হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে তিনটি শট ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনাকে তুলে দেন তিনি কোপা আমেরিকার ফাইনালে।
নদী বন্দর / বিএফ