দিনাজপুরে বৃষ্টির আশায় মহা ধুমধামে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। শহরের রাজবাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন পাঁচ শতাধিক। সেখানে নেচে-গেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান উদযাপন করেন তারা।
রোববার (২৫ জুলাই) রাতে রাজবাড়ি চত্বরের হিরা বাগান রক্ষাকালী মন্দিরে সনাতন ধর্মের (হিন্দু) নিয়মে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ছায়ামণ্ডপ, পুষ্পমাল্য, গায়ে হলুদ, আশীর্বাদের ধান-দূর্বা, খাওয়ার আয়োজনসহ সব ব্যবস্থাই ছিল এ বিয়েতে।
আয়োজকরা জানান, শ্রাবণ মাসের ১০ দিন। কিন্তু বৃষ্টি নেই। জমিতে পানি নেই। আমন চারা রোপণ করা যাচ্ছেনা। আবার যে জমিগুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমিগুলো পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। অনেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন। এ কারণে যাতে বৃষ্টি আসে সে জন্য ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
তারা জানান, গত সাতদিন ধরে চলে বিয়ের প্রস্তুতি। রাজবাড়িতে বসবাসকারী পরিবারের শিশুরা সাতদিন আগ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচে-গেয়ে টাকা, চাল, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ সময় প্রতিটি বাড়িতে বিয়েতে আসার দাওয়াত দেয়া হয়।
রোববার সন্ধ্যা থেকে মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে থাকে। কলা গাছ ও ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের স্টেজে রাত আটটার দিকে বরকে নিয়ে সুলেখা সরকার ও কনেকে নিয়ে চন্দনা সরকার অনুষ্ঠানে হাজির হন। রঙ- কাদা মেখে শুরু হয় নাচ-গান। পাশেই চলে বড় বড় হাড়িতে রান্না। উপস্থিত অতিথিরা বর কনেকে দেখে উপহার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
১০১ টাকা প্রতীকী পণে বিয়ে পড়ান হিরা বাগান রক্ষাকালী মন্দিরের পুরোহিত তোপন কুমার গোস্বামী। তিনি এ সময় বলেন, ‘অনাবৃষ্টি ও খরা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে শিশুরা এ ব্যাঙের বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও পরে সেটি উৎসবে রূপ নেয়। আমাদের বিশ্বাস এ ব্যাঙের বিয়ের মধ্য দিয়ে অনাবৃষ্টি ও খরা কেটে যাবে।’
বর-কনের মা বলেন, ‘খরা থেকে মুক্তি পেতে এবং বৃষ্টির আশায় এ আয়োজন। অনাবৃষ্টির কবলে পড়লে তারা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে থাকেন। আর এই রীতি শতবর্ষ আগে থেকেই চলে আসছে। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সেই সময় থেকে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন হয়।’
নদী বন্দর / এমকে