দেশের নদ-নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করেছেন উচ্চ আদালত। তাই নদীর প্রতি সবাইকে আরও মানবিক হতে হবে। এ মানবিকতা শুধু পরিবেশবাদী বা নদীসংগ্রামী ব্যক্তির নয়, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক দলগুলোকে জীবন্ত সত্তার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ‘বিশ্ব নদী দিবস’ সামনে রেখে সিলেটে সুরমা নদীর তীরে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার অ্যালায়েন্স’ আয়োজিত ‘রিভার টকি’ (নদী কথকতা) অনুষ্ঠান থেকে এ আহ্বান জানান জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।
সিলেট নগরের কিনব্রিজের নিচে সুরমা নদীর ঐতিহ্যবাহী চাঁদনিঘাটের সিঁড়ির পাশে রিভার টকি অনুষ্ঠান চলে বিকেলে সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত।
এবারের নদী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মানুষের জন্য নদী’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সহ-সভাপতি ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন, স্থপতি সাইকা তাবাসসুম চৌধুরী, গণমাধ্যমকর্মী উজ্জ্বল মেহেদী ও সংস্কৃতিকর্মী অরূপ দাশ।
ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোস্তাফা শাহজামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুরমা রিভারকিপার ও বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম। রিভার টকি সঞ্চালনা করেন তামান্না ইসলাম।
সূচনা বক্তৃতায় আবদুল করিম কিম বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন করতে শুরু করে ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। এরপর ২০০৫ সাল থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা দিবসটি পালন করছে। ২০০৫ সালে জাতিসংঘ দিবসটি অনুসমর্থন করে।
এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর সব সভ্যতা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। আমাদের অতীত ইতিহাস নদ-নদীতে ভরপুর। কিন্তু আমরা নদীকে সুরক্ষা করতে পারছি না। আমাদের উজানে নদ-নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে, এটা অন্যায়। কিন্তু এ অন্যায়ের প্রতিবাদ হয় না। যৌথ নদীকমিশন ভারতের শিলচরে একটি সভা করার কথা ছিল। সেটি হয়নি, এজন্য উজান থেকে নেমে আসা নদীর মরুময়তার কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। এজন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার।
নদ-নদী রক্ষায় রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নেতা। আ’লীগ নেতা এ টি এম হাসান জেবুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার পরিবেশকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষা চাই। নদ-নদীর দখল-দূষণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সচেতনতায় আমরা কাজ করবো। যেকোনো পদক্ষেপে সোচ্চার থাকবো।’
বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান বলেন, ‘পরিবেশ ও প্রকৃতির সুরক্ষা শুধু পরিবেশবাদীদের কাজ নয়, সবার কাজ। রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে, সমস্যা হচ্ছে মানুষের সচেতনতার অভাব। নদ-নদীর প্রতি গণমানুষকে সচেতনতা আগে প্রয়োজন। এ কাজটি রাজনৈতিক নেতারা করতে পারেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন বলেন, ‘নদী রক্ষা এখন জীবন রক্ষার নামান্তর। এজন্য যার যার অবস্থান থেকে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’
স্থাপতি সাইকা তাবাসসুম চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশিরা তাদের যেকোনো স্থাপত্যে নদী চান। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো স্থাপত্যে নদী চাওয়া হয় না। স্থপতির ভাবনায় নদীকে রাখতে হবে।’
সভাপতির বক্তৃতায় ডা. মোস্তাফা শাহজামাল চৌধুরী বাহার বলেন, ‘রিভার টকি থেকে নদীর কোনো বিকল্প নেই, এ বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। নদী রক্ষায় আইন আছে। তবে সবার মধ্যে সচেতনতা থাকতে হবে। এ সচেতনতা সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সবার থাকতে হবে। ভালোবাসা আর মানবিকতা আমাদের নদ-নদীকে সুরক্ষা দেবে।’
নদী বন্দর / বিএফ