কী অসাধারণ ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে নিউজিল্যান্ড! এখন বিশ্বকাপ মানেই যেন ফাইনালিস্ট একটি দলের নাম নিউজিল্যান্ড। এবারও তারা সেটা প্রমাণ করলো। শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেলো ব্ল্যাক ক্যাপসরা।
ডেভন কনওয়ে, ড্যারিল মিচেল এবং জিমি নিশামের ঝড়ো ব্যাটিংয়েই ১ ওভার হাতে রেখে ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ১৬৬ রানের বাধা অতিক্রম করে গেছে কিউইরা।
শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ২০ রান। সেট হওয়া ব্যাটসম্যান ড্যারিল মিচেল ছিলেন উইকেটে। ইংলিশ বোলার ক্রিস ওকস। তাকে দুটি ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারি মারলেন মিচেল। সিঙ্গেল ২টি এবং ডাবল নিলেন ১টি। ওভারের শেষ বলটিকে ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।
অথচ, ১৫তম ওভারে গিয়ে ১০০ রানের গণ্ডি পার হয়েছিল কিউইরা। এক সময় তো মনে হচ্ছিল, এত স্লো ব্যাটিং করছে নিউজিল্যান্ড! তাহলে কিভাবে তারা ফাইনালে যাবে? প্রথম ১০ ওভার তো বলতে গেলে ঠুকে ঠুকেই পার করেছে নিউজিল্যান্ড। কারণ, প্রথম ১০ ওভারে রান উঠেছে কেবল ৫৮টি। পরের ৯ ওভারে নিউজিল্যান্ড রান তুলেছে ১০৯টি।
মূলতঃ গ্লেন ফিলিপস আউট হওয়াটাই যেন কিউইদের জন্য সাপে বর হয়েছে। কারণ, ফিলিপস আউট হওয়ার পরই মাঠে নামেন জিমি নিশাম। মাঠে নেমেই রীতিমত টর্নেডো বইয়ে দেন তিনি ইংলিশ বোলারদের ওপর।
উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। কেবল ১১ বল। তাতেই ৩টি ছক্কা এবং ১টি বাউন্ডারি মেরে নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা ঝড়ের বেগে বাড়িয়ে দেন তিনি। আদিল রশিদের বলে ১৮তম ওভারের শেষ বলে ইয়ন মরগ্যানের হাতে ধরা পড়লেও ততক্ষণে ড্যারিশ মিচেলকে নিয়ে মূল কাজটি করে ফেলেন জিমি নিশাম।
পরের ওভারে তো ড্যারিল মিচেল একাই সব কাজ সেরে ফেলেন। ক্রিস ওকসের ওভার থেকেই ২০ রান নিয়ে ফেলেন। পরের ওভার পর্যন্ত আর খেলাকে টেনে নিতে দেননি। ড্যারিল মিচেল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন এবং ৪৭ বলে করেন ৭২ রান। ৪টি করে বাউন্ডারি এবং ছক্কার মার মারেন তিনি।
অথচ, ১৬৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর ইংলিশদের সাঁড়াসি আক্রমণের মুখে মাত্র ১৩ রানেই মার্টিন গাপটিল এবং কেন উইলিয়ামসনের মত সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। রীতিমত ব্যাটিং বিপর্যয় বলা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে উইকেট বাঁচানো ছিল প্রাথমিক কাজ। সে কাজেই যেন খুব মনযোগী হয়ে ওঠেন ডেভন কনওয়ে এবং ড্যারিল মিচেল। তৃতীয় ওভারে বাধার পর তাদের জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ১৪তম ওভারে। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে রান যোগ হয় ৯৫টি।
এ সময় আউট হন ডেভন কনওয়ে। ৩৮ বলে ৪৬ রান করে আউট হন তিনি। ৫টি বাউন্ডারি এবং একটি ছক্কার মার মারেন তিনি। কনওয়ে আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন গ্লেন ফিলিপস। ৪ বলে ২ রান করে আউট হন তিনি।
ফিলিপস আউট হওয়ার পরই মাঠে নামেন জিমি নিশাম এবং মাত্র ১১ বলের ঝড়ো ইনিংসেই ম্যাচের চিত্র পাল্টে দেন তিনি। ইংলিশদের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন ক্রিস ওকস এবং লিয়াম লিভিংস্টোন। ১টি উইকেট নেন আদিল রশিদ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে মইন আলির ৩০ বলে ৫১ রানের ওপর ভর করে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৬ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। ৩০ বলে ৪১ রান করেন ডেভিড মালান। ২৪ বলে ২৯ রান করেন জস বাটলার।
২০১৫ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম ফাইনালে খেলে কিউইরা। সেবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় তারা। এরপর ২০১৯ বিশ্বকাপেও ফাইনাল খেলে তারা। কিন্তু ফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সুপার ওভারের নাটকীয়তায় বিশ্বকাপ জেতা হয়নি কিউইদের।
এরপর সর্বশেষ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও উঠে যায় নিউজিল্যান্ড। ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারেরমত আয়োজিত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট জিতে নেয় কেনে উইলিয়ামসনের দল। আর এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে কিউইরা।
নদী বন্দর / সিএফ