রাজধানীর গুলিস্তানে রাস্তা পারাপারের সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় গাড়িচালক রাসেল খান ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। গাড়িটির প্রকৃত চালক ছিলেন মো. হারুন। হারুনের কাছ থেকে চাবি নিয়ে সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয় রাসেল।
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে পল্টন মডেল থানায় মতিঝিল বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এসব কথা বলেন মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ।
তিনি বলেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রাসেল খান। তিনি প্রকৃতপক্ষে ওই গাড়ির চালক নয়। আমরা গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ও গ্রেফতার রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গাড়িটির মূল চালক হারুন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা বিষয় লক্ষ্য করা গেছে, তা হলো কেউ কেউ লিখছেন- প্রকৃত চালক গাড়িটির ভেতরেই ছিলেন এবং তিনি পালিয়ে যায়। বিষয়টি সত্য নয়। এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। কেউ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। গাড়িতে প্রকৃত চালক ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ দেওয়া গাড়ির চালক হারুন। গাড়িটি চালানোর কথা হারুনের কিন্তু তিনি না চালিয়ে রাসেলকে দিয়ে চালাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে হারুনকে গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত। দ্রুতই তাকে আমরা আইনের আওতায় আনবো। হারুনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কেন রাসেলকে দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
গ্রেফতার রাসেলের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাসেল সিটি করপোরেশনের কেউ না। তবে সিটি করপোরেশনের কিছু কাজ করেন। রাসেল জানিয়েছেন তার আত্মীয়–স্বজন সিটি করপোরেশনে চাকরি করে সেই সূত্র ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
রাসেল এর আগেও এই গাড়ি চালিয়েছেন নাকি সেদিনই প্রথম- এমন প্রশ্নের জবাবে আ. আহাদ বলেন, রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানান এর আগেও গাড়িটি চালিয়েছেন।
গাড়ির চাবি সিটি করপোরেশনের কেউ দিয়েছিল নাকি হারুন দিয়েছিল। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কেউ দেয়নি। গাড়ির চাবি হারুনই রাসেলকে দিয়েছিলো।
মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, গত ২৪ নভেম্বর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানার গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার গোলচত্বরের দক্ষিণ পাশে কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান (১৮) রাস্তা পার হওয়ার সময় পূর্ব দিক থেকে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি ট্রাক (রেজিঃ নম্বর ঢাকা মেট্রো-শ ১১-১২৪৪) চালক রাসেল খান বেপরোয়া গতিতে ময়লা নিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়।
যার ফলশ্রুতিতে ভিকটিমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়। তখন স্থানীয় জনগণ ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে বেলা পৌনে ১২টায় মৃত ঘোষণা করেন।
দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার টহল পুলিশ ও পথচারীরা ট্রাকের চালক রাসেল খান ও গাড়ির ভেতরে থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মী গোলাম রব্বানী ও বেলালকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের অফিসের পূর্ব প্রান্ত থেকে আটক করে।
আ. আহাদ বলেন, সেখান থেকে পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয় ও ময়লার গাড়ি জব্দ করে। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়না তদন্ত শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতের বাবা শাহ আলম দেওয়ান বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছে। রাসেল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভার না। গাড়িটির নিয়োগপ্রাপ্ত ড্রাইভার হারুন রাসেল খানকে বদলি হিসেবে চালাতে দেয় ও গ্রেফতার চালক রাসেল খান ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।
নদী বন্দর / এমকে