তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমরা ইউরোপের অন্ধ অনুকরণে এমন বস্তুগত উন্নয়ন চাই না, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে শত শত গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে যায়। কেউ খবর রাখে না। ইউরোপের মতো তেমন উন্নয়ন চাই না, যেখানে বাবা-মা বৃদ্ধ হলে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে হবে, আবার ৫০ শতাংশ বিয়ে ভেঙে যাবে, সেই উন্নয়ন চাই না।’
বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংকটে, সংগ্রামে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর সামনে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই বিষয়টি এখন অকপেটে স্বীকার করছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছিলেন। তিনি জানতেন কখন কোন বিষয়টি জনগণের সামনে আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরের জন্য কাজ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তাকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আজ পর্যন্ত এই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে এবং সেইভাবে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে স্বাধীনতার ১০-১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্র হতো।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাথাপিছু আয় পশ্চিম পাকিস্তানের প্রায় অর্ধেক ছিল। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যায়। ওই সময় পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলার এবং বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১২০ ডলার।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মাথাপিছু আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, মানব উন্নয়নসহসহ সব সূচকে আজকে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এটাই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ রচনার স্বার্থকতা। আজকে পাকিস্তান আমাদের দিকে তাকিয়ে হা-হুতাশ করে। পাকিস্তানের আলোচনার ঝড় ওঠে। সেদেশের প্রধানমন্ত্রী অকপটে স্বীকার করে সব সুচকে বাংলাদেশ তাদের পেছনে ফেলে গেছে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা কেবল উন্নত রাষ্ট্র নয়, ২০৪১ সালের মধ্যে এমন একটি রাষ্ট্র রচনা করতে চাই। যে রাষ্ট্র হবে মানবিকতা ও সামাজিক উন্নয়নের উদাহরণ। যে রাষ্ট্রের বস্তুগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিকতার উন্নয়ন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মেধা, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ সমৃদ্ধ নতুন একটি প্রজন্ম সৃষ্টি করতে চাই, যারা ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে এমন একটা রাষ্ট্রে রূপান্তর করবে যেই রাষ্ট্র পৃথিবীর সামনে উন্নয়ন ও মানবিকতায় উদাহরণ সৃষ্টি করবে। পৃথিবীকে পথ দেখাবে। তখন মেঘের ওপার থেকে, আকাশের ওপর থেকে বঙ্গবন্ধু দেখবেন বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তর হয়েছে।’
বুধবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে এই সাধারণ আলোচনার জন্য প্রস্তাব তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। দুদিন আলোচনা শেষে আজ প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হবে।
নদী বন্দর / জিকে