দেশের বিভিন্ন শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বড় অংশ অপুষ্টির শিকার। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু তৈরি পোশাক শিল্পেই শ্রমিকদের মধ্যে শতকরা ৪৩ জন নারী অপুষ্টিতে ভুগছেন।
এছাড়া ২০০৫ সালে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) রিপোর্ট অনুযায়ী, অপুষ্টির কারণে শ্রমিকের কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা ২০ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শ্রমিকের নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
রোববার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘কর্মক্ষেত্রে পুষ্টি কার্যক্রম: শিক্ষণ বিনিময়’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সহযোগিতায় ছিল সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত এবং উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি ৪৮ বছর আগে পুষ্টি বিষয়টিকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। সে কারণেই জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শ্রমিকের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এছাড়া যারা খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সরবরাহ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত তাদেরকেও নিরাপদ ও পুষ্টির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
সেমিনার থেকে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি ‘ওয়ার্কফোর্স নিউট্রিশন অ্যালায়েন্স’ তৈরির ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করা হয়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহসান-ই-এলাহীর সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় পুষ্টি সেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত অ্যান্নে ভান লিউওয়েন, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গৌতম কুমার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেলথ সার্ভিসেস ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব ও সান (স্কেলিং আপ নিউট্রিশন) ফোকাল কাজী জেবুন্নেসা বেগম, গেইন-বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রুদাবা খন্দকার, বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান ও বিকেএমইএ’র নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নেতারা। অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের পুষ্টির গুরুত্ব বিষয়ক উপস্থাপনা তুলে ধরেন গেইন বাংলাদেশের পোর্টপোলিও লিড মনিরুজ্জামান বিপুল।
এছাড়া অনুষ্ঠানে গেইন পরিচালিত পুষ্টি বিষয়ক প্রকল্প ‘স্বপ্ন’র চূড়ান্ত মূল্যায়নের গবেষণায় ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, পোশাক কারখানার কর্মীদের কাজের গতি বাড়াতে দুপুরের পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় আরও বলা হয়, প্রশিক্ষিত ‘পুষ্টি বন্ধুর’ মাধ্যমে অন্য সব কর্মীদের পুষ্টি জ্ঞান প্রদানের বিষয়টি কার্যকর ও বাস্তবসম্মত।
নদী বন্দর / জিকে