অনিয়মিত জীবন ধারণের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে দিন দিন হার্টের রোগ বেড়েই চলছে। একমাত্র সচেতনতাই পারে এ রোগের হার কমিয়ে দিতে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ডিভিশনের প্রধান ডা. হারিসুল হক বলেন, ‘রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রতিটি মানুষেরই কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে নিয়মিত হাঁটা ও শাক-সবজি খাওয়া বাড়াতে হবে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় আধা কেজি শাক-সবজি ও ফলমূল আপনাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে হৃদরোগের ভয়াল ছোবল থেকে।’
নানা গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের পর স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা প্রতিদিনের খাবারের মোট ক্যালোরির ৫-৬ শতাংশ কেবল চর্বি থেকে সংগ্রহ করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। অর্থাৎ দৈনিক চাহিদা অনুযায়ী ২০০০ ক্যালোরির ডায়েট থেকে স্যাচুরেটেড চর্বি খেতে পারবেন ১১ থেকে ১৩ গ্রাম পর্যন্ত।
একই সঙ্গে দুশ্চিন্তাও হৃদরোগের জন্য দায়ী। হঠাৎ করে কোনো সংবাদ শুনলে বা ভয় পেলে তাৎক্ষণিক উত্তেজিত হয়ে পড়বেন না। ওই মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। হঠাৎ করে ভয় কিংবা দুশ্চিন্তা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ হতে পারে।
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে এখন থেকেই কিছু অভ্যাস গড়তে হবে। হৃদরোগে আক্রান্তরাসহ সবারই উচিত বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা। এ বিষয়ে ডা. হারিসুল হক বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন-
>> দৈনিক ৪-৫ কিলোমিটার বেগে অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে।
>> যদি হাঁটতে না পারেন তাহলে অন্তত ১৫ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন।
>> ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
>> ভাত, রুটি, আলুর মতো কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার পরিহার করুন।
>> চিনি ও লবণ এড়িয়ে চলুন। দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাবেন না।
>> প্রতিদিনের খাবারে তেলের পরিমাণ ১৫-২০ মিলিলিটার রাখুন।
>> খাবারে অন্তত ৫ পদের শাক-সবজি রাখতে হবে অন্তত ৫০০ গ্রাম।
>> ধূমপান পরিহার করুন। বায়ু দূষণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করুন।
>> ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট ও কিডনির রোগীদের বিশেষ সতর্কতা ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে জীবনযাপন করতে হবে।
>> ৬ মাস অন্তর পুরো বডি চেকআপ করাতে হবে। বিশেষ করে ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করুন।
>> সরিষার তেল কিংবা অলিভ অয়েল বা ভেজিটেরিয়ান অয়েল দিয়ে রান্না করুন।
>> যেসব প্রাণীর বেশি পা থাকে তাদের মাংস খাওয়া যাবে না- যেমন চিংড়ি, গরু-খাসির মাংস ইত্যাদি।
>> মাসে ৩ থেকে ৪ দিন নিয়মের ব্যতিক্রম হলে অসুবিধা নেই। তবে বাকি দিনগুলো এভাবেই চলতে হবে।
নদী বন্দর / পিকে