স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইন সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি কার্যকর ও শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি সক্ষমতা অর্জন করবে।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত ‘কার্যকর স্থানীয় সরকার জাতীয় কনভেনশন-২০২১’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের সব আইন পর্যালোচনা করে যুগোপযোগী করতে সংশোধন করা হচ্ছে। আইন সংশোধন হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি শক্তিশালী, কার্যকর ও সক্ষম হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোথাও কোনো দুর্বলতা থাকলে সেগুলো খুঁজে বের করার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সারাবিশ্বে গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত যে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো যত বেশি শক্তিশালী করা যাবে তত বেশি উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দরকার জনগণের অংশগ্রহণ।’
মন্ত্রী বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার আওতায় আনার অর্থ হেয় করা না। বরং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটরিং করা, সরকার ও জনগণ প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা।
মো. তাজুল ইসলাম জানান, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ সবাইকে সহাবস্থান করে কাজ করতে হবে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সমন্বয় করে কাজ করার বিকল্প নেই। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন।
জনপ্রতিনিধিদের নিয়মিত অফিস করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হয়ে এটাকে অপশনাল হিসেবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জনগণ আপনাকে জোর করে ক্ষমতায় বসাননি বরং আপনি জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চেয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে।
জনপ্রতিনিধিদের নাগরিক সেবায় আরও বেশি মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের সম্মানিত ও মর্যাদাশীল করার জন্য তার মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার তাগিদ দিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এজন্য মানুষের ওপর আবার জুলুম করা যাবে না। নাগরিক সেবা বৃদ্ধিই পারে রাজস্ব আয় বাড়াতে। জনগণ যখন বুঝবে তাদের দেওয়া অর্থ তাদের কল্যাণে ব্যবহার হবে তাহলে তারা রাজস্ব দিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবে।
এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম আরও বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় সরকারের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। এসব প্রতিষ্ঠান নিজেদের আয় দিয়ে পরিচালিত হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার বড় বড় অর্থাৎ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো রাজস্ব আয় দিয়ে এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন করবে। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদকে ইনকাম জেনারেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব স্থান থেকে রাজস্ব আদায় করা যাবে, সে বিষয়ে স্টাডি করেন। এসব প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হলে দেশ এগিয়ে যাবে।
গভর্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের চেয়ারপারসন ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদ উপস্থিত ছিলেন।
নদী বন্দর / জিকে