ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকলো ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা।
পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী ঘণ্টা দেড়েক দেরি হলেও নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে এদিন ত্রিপুরায় উদ্বোধন হলো মহারাজা বীর বিক্রম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নবনির্মিত টার্মিনাল ভবন। স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে এক জনসভা থেকে ভবন উদ্বোধন করেন মোদি।
মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনটি ঘুরে দেখার সময় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ছিলেন- কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধ্রিয়া, ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ্যপাল সত্যদেও নারায়ন আর্য, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, উপ-মুখ্যমন্ত্রী স্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মাসহ প্রদেশ বিজেপির সভাপতি ড. মানিক সাহা এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এদিন টার্মিনাল ভবন উদ্বোধন করার পাশাপাশি মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি বিদ্যালয় এবং মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা গ্রাম সমৃদ্ধি যোজনারও আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন দপ্তরের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, সংসদ সদস্য রেবতী ত্রিপুরা এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যরা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডবল ইঞ্জিন সরকারের কোনো বিকল্প নেই। ডবল ইঞ্জিন মানে সেবা, সমৃদ্ধি, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। বছরের শুরুতেই ত্রিপুরার জনগণ মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদ হিসেবে এই তিনটি বড় বিষয় উপহার হিসেবে পেয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদি আরও বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়ন নিয়ে এক সময় আগের সরকারগুলোর কোনো চিন্তাভাবনা ছিলো না। কিন্তু এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘হীরা মডেলে’র কথা বলেছিলেন। মানুষ তাতে সাড়া দেওয়ায় এখন তার ফল পেতে শুরু করেছে।
এরপরই হীরা শব্দের অর্থ বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার কথায়, এইচ ফর হাইওয়ে, আই ফর ইন্টারনেট, আর ফর রেলওয়ে এবং এ ফর এয়ারওয়েজ। ত্রিপুরা রাজ্যের নতুন এই বিমানবন্দরে অবতরণ করলেই রাজ্যের উন্নয়নের এইসব চিত্র ভেসে উঠবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন এই মডেলের মাধ্যমেই ত্রিপুরা আজ যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করছে। সমগ্র পূর্বোত্তরের গেটওয়ে হিসেবে ত্রিপুরা যাতে আত্মপ্রকাশ করে, সেই লক্ষ্যে দারুণ কাজ হচ্ছে ত্রিপুরা রাজ্যে। যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক করে তোলার জন্য এখন যে কাজ হচ্ছে আগে তা কখনও হয়নি বলেও তিনি
জানান।
রাজ্যের বাঁশজাত শিল্পের প্রশংসা করে মোদি বলেন, এ জাতীয় সামগ্রীর জন্য দেশে বড় বড় বাজার গড়ে উঠছে। অর্গানিক ফার্মিং নিয়েও ত্রিপুরায় দারুণ কাজ হচ্ছে। রাজ্যের উৎপাদিত আদা, হলুদ, মরিচের জন্যও বাজার গড়ে তোলা হচ্ছে এখন।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নয়া সরকার গঠনের পর রাজ্যের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে রাজ্যের মানুষ আত্মনির্ভর ও স্বাভিমানিও হয়েছেন। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প যেমন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, সৌভাগ্য যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা, ইত্যাদির মাধ্যমে রাজ্যের মানুষ এখন নতুন দিশা পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধ্রিয়া বলেন, ঐতিহাসিক এই দিনটি ত্রিপুরাবাসীর জন্য উৎসবের দিন। ত্রিপুরার ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে ত্রিপুরাকে একটি পিছিয়ে পড়া রাজ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। এতদিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর মধ্যে যেখানে মাত্র ছয়টি বিমানবন্দর ছিল, সেখানে বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ১৫টি বিমানবন্দর এবং ১৭টি হেলিপ্যাডও তৈরি করা হয়েছে।
নদী বন্দর / পিকে