আফ্রিকায় বহু উপাদানের সংমিশ্রণে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এখন সবার নজরে পড়ছে। খাবারে কিংবা পোশাকে, বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের অধিকারী এই বৃহত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ। প্রাচীনকাল থেকে ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে উপনিবেশ-পরবর্তী আফ্রিকার অবস্থান ছিল দুর্বল।
এখানকার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা খুবই অনুন্নত। কোনো কোনো অঞ্চল এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। তবুও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আফ্রিকার তরুণ সমাজ। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি একত্রিত হয়ে জায়গা করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিসরে।
২০২২ সালের জুনে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া এবং আলবার্ট (ভি অ্যান্ড এ) জাদুঘর স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আফ্রিকার ফ্যাশনের ইতিহাসের ওপর একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছে। এটা অনেকের কাছেই একটি উচ্চাভিলাষী কাজও বটে। যদিও পুরো মহাদেশের চিত্র নিশ্চয় একটি প্রদর্শনীতে তুলে আনা সম্ভব নয়। তবে এই প্রদর্শনীতে ২৫০টির মতো আফ্রিকার সাংস্কৃতিক উপাদান বিভিন্ন পোশাকের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে। প্রদর্শনীতে জায়গা পাবে আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী ট্যাসেল, বিডিং এবং ওয়াক্স প্রিন্ট।
২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যেও নাইজেরিয়ার লাগোস শহরে ফ্যাশন সপ্তাহের আয়োজন করা হয়। অনুর্ধ্ব ৩০ বছরের তরুণ ডিজাইনাররা ভার্চুয়ালি দর্শকদের বিভিন্ন ডিজাইন প্রদর্শন করেন। অনুষ্ঠান শেষে একে ফ্যাশনের জন্য ‘সবুজ অঙ্কুর’ আখ্যা দেন জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত নাওমি ক্যাম্পবেল। মহামারিতে আফ্রিকার উপর জুড়ে বসা অর্থনৈতিক চাপকে তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনরা অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন বিশ্বখ্যাত এই মডেল।
লাগোস স্পেস প্রোগামের মতো ভি অ্যান্ড এ-এর সংশ্লিষ্টরা আফ্রিকান ডিজাইনারদের ওপর আলোকপাত করবেন যারা বিশ্বের ফ্যাশন রাজধানীতে ক্রমবর্ধমানভাবে স্বীকৃত হচ্ছেন। আফ্রিকার প্রতিভাবান শিল্পীরা সবচেয়ে বড় পুরস্কারের জন্য অপেক্ষা করছেন। এরকম একটি পুরস্কার হচ্ছে এলভিএমএইচ পুরস্কার। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার থিবে মাগুগু এই পুরস্কার অর্জন করেন।
পশ্চিম আফ্রিকান বয়ন কৌশলের জন্য নাইজেরিয়ান ডিজাইনার ইমানুয়েল ওকোরো আফ্রিকান ডিজাইনারদের জন্য আফ্রিকা ফ্যাশন আপ সংস্করণের জন্য সেরা পুরস্কার জিতে নেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্যারিসে ওই ফ্যাশন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানেই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিলাসবহুল স্প্যানিশ ফ্যাশন হাউজ ব্যালেঞ্চিয়াগা এই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করে।
ছোট ছোট আয়োজনের মধ্য দিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন শহরের নিজস্ব বৈচিত্র্য, সমৃদ্ধ ফ্যাশন ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। ডাকার, জোহানেসবার্গ এবং লাগোসে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন সপ্তাহিক প্রদর্শনীগুলো আশা জাগাচ্ছে। কিনশাসার ড্যান্ডি সেপার্স থেকে জোহানেসবার্গের আফ্রোপাঙ্ক পর্যন্ত সমৃদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশ অব্যাহত থাকবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
আমেরিকায় আফ্রিকান পোশাকের প্রদর্শন ও তারকাদেরও দেখা যাচ্ছে তা অনুসরণ করতে। এমনকি গ্যামি অ্যাওয়ার্ডে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানেও আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়ছেন অনেকেই।
আফ্রিকায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উপাদান সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তা এখন তরুণদের হাত ধরে প্রস্ফুটিত হচ্ছে। তাক লাগানো শৈলি, যুগের প্রতিনিধিত্ব, স্থায়িত্বের উপর নজর দেওয়া, পুরোনো উপকরণ থেকে গয়না তৈরি ধীর গতিতে চললেও ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে মানানসই যা পরবর্তী দশককে সংজ্ঞায়িত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২১ সালের অক্টোবরে ঘানার নারী ব্যবসায়ী রবার্তা আনান ১১৬ মিলিয়ন ডলারের লুক্সেমবার্গভিত্তিক ফান্ড চালু করেন। এই ফান্ড থেকে আফ্রিকার মেধাবী তরুণ ছোট ও মাঝারি স্তরের ডিজাইনার ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার পাশাপাশি পুরস্কৃত করা হবে।
ইন্ডাস্ট্রি আফ্রিকা তানজানিয়ায় অবস্থিত উদীয়মান ডিজাইনারদের একটি অনলাইন ক্যাটালগ। তারা সম্প্রতি নিজেদের সাইটে একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যুক্ত করেছে। ডিজাইনারদের জন্য অর্থ ব্যয় করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জড়িত থাকার জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মানুষের কাছে পৌঁছানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। সেকারণেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রয়োজনীয় আর্থিক ও বিভিন্ন সহযোগিতার অভাবে থাকা ডিজাইনাররা নানা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও আফ্রিকার ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ করতে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। ফ্যাশন সম্পর্কিত শিক্ষার অভাব, বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে এলিটদের দাপুটে আচরণের কারণে পিছিয়ে থাকছেন তারা। তবুও ছোট ছোট উদ্যোগ আগামীতে আফ্রিকার ফ্যাশন বাণিজ্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে এমনটাই আশা।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
নদী বন্দর / জিকে