বোলাররাই মূলত জিতিয়েছেন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট, ইতিহাসগড়া জয়ের পর অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছিলেন এমন কথাই। সেই বোলাররা এবার চরম হতাশ করলেন।
ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টস জিতে বোলিং বেছে নেওয়াই যেন কাল হলো বাংলাদেশের। প্রথম দিন শেষে ১ উইকেটেই ৩৪৯ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড।
বোলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি, এটা যেমন সত্য। ক্যাচ মিস, রানআউট মিসও হয়েছে। সেইসঙ্গে আবার রিভিউও বেশ কয়েকবার হতাশ করেছে বাংলাদেশকে।
কপাল বোধ হয় একেই বলে! দিনের শুরুর দিকেই এক ওভারে দুই-দুইবার বেঁচে গিয়েছিলেন টম লাথাম। যখন তার রান ছিল মাত্র ১৬। সেই লাথামই দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি তুলে ডাবল সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে।
অথচ হ্যাগলি ওভালের সবুজ উইকেটে টস জিতে বড় আশা নিয়ে বোলিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। দুই পেসার তাসকিন আহমেদ আর শরিফুল ইসলাম শুরুটাও করেছিলেন দারুণ। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম ৮ ওভারে মাত্র ২২ রান তুলতে পারে কিউইরা।
নবম ওভারে গত ম্যাচের নায়ক এবাদত হোসেনকে আক্রমণে নিয়ে আসেন মুমিনুল। প্রথম ওভারেই ভয় ছড়িয়েছিলেন ডানহাতি এই পেসার, উইকেটও পেতে পারতেন।
এবাদতের দ্বিতীয় বলটি লাথামের থাই প্যাডে আঘাত করলে জোরালো আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার আঙুলও তুলে দেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লাথাম। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যেত।
একই ওভারের পঞ্চম বলে আবার এলবিডব্লিউয়ের আবেদন। এবারও এবাদতের আবেদনে আঙুল তোলেন আম্পায়ার এবং এবারও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লাথাম। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল স্টাম্পের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল।
দুইবার বেঁচে যাওয়া লাথাম সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন পুরোপুরি। উইকেটে সেট হয়ে দেখিয়েছেন রুদ্ররূপ। উইল ইয়ংকে নিয়ে প্রথম সেশন অনায়াসে কাটিয়ে দেন কিউই দলপতি। ২৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৯২ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড।
বিরতির পরপরই আরেকটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন এবাদত। এবার ইয়ংয়ের ক্যাচ দ্বিতীয় স্লিপে ফেলে দেন লিটন দাস। ওই বলে দৌড়ে তিন নেওয়ার পর ওভার থ্রোতে আরও চার রান পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। মিস হয় রানআউটের সুযোগ।
কিউইরা চালিয়ে খেলতে থাকে। চারের কাছাকাছি ওভারপ্রতি রান নিয়ে এগোচ্ছিলেন লাথাম-ইয়ং। শেষপর্যন্ত তাদের ১৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটিটি ভাঙেন শরিফুল ইসলাম।
শরীরের বাইরের বল মারতে গিয়ে পয়েন্টে নাইম ইসলামের ক্যাচ হন ইয়ং। ৫৪ রানে থামে কিউই ওপেনারের ইনিংস। তবে নিজের হোম গ্রাউন্ডে বড় সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি দুই-দুইবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া লাথাম।
ইয়ং আউট হওয়ার পর কনওয়েকে নিয়ে বাংলাদেশি বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন লাথাম। শেষ সেশনে ইনিংসের ৮০তম ওভারে মেহেদি হাসান মিরাজের বলে কট বিহাইন্ডের জোড়ালো এক আবেদন হয়েছিল। আম্পায়ার সাড়া না দিলে মুমিনুল রিভিউও নিয়ে নেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাটে স্পর্শ করেনি। লাথাম তখন ১৬৯ রানে।
এরপর আর বলার মতো সুযোগ আসেনি। লাথাম-কনওয়ে জুটি ২০১ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকেই দিন শেষ করেছে। লাথাম ১৮৬ রান নিয়ে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে তাকিয়ে। সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে আছেন কনওয়ে। ৯৯ রানে অপরাজিত তিনি।
বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন শরিফুল। ১৮ ওভারে ২.৭৭ ইকোনমিতে ৫০ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। বাকিরা সবাই ওভারপ্রতি তিনের ওপর খরচ করেছেন।
নদী বন্দর / সিএফ