কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষকরা। আগাম জাতের ভুট্টা চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ এবং রোগবালাই খুব কম হয়। তাই আগাম জাতের ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
এ মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলার ১৩০০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আগাম ১২ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হওয়ায় ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষকরা জানান, অল্প শ্রম, কম খরচ এবং লাভ বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে তাদের। প্রতি শতক জমিতে প্রায় ২ মণ করে ভুট্টা উৎপাদিত হয়। এতে উৎপাদন খরচের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হয়। শুধু তা-ই নয়, ভুট্টার কাণ্ড জ্বালানি ও গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে এর পাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ভুট্টার আটা, মাছের খাদ্য, মুরগির খাবারসহ বিভিন্ন কাজে লাগে বলে জানান তারা।
রৌমারী উপজেলার চর গয়টাপাড়া গ্রামের ভুট্টা চাষি মুকুল মিয়া ও বাগুয়ার চর গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, বন্যার পানির সঙ্গে জমিতে বালু আসায় এতে করে ইরি-বোরো চাষ না হওয়ায় সেসব জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে জমিতে সার বেশি লাগে। কিন্তু অন্যান্য ফসল এবং ইরি-বোরো ধান চাষের চেয়ে ভুট্টার আবাদে অনেক বেশি লাভ হয়।
রৌমারী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম কাজল বলেন, এবার রৌমারীতে আগাম ৩৯৬১ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হওয়ায় বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করি আগামীতে ভুট্টা চাষে আরও অনেক বেশি আগ্রহী হবেন কৃষকরা।
ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে সারিবদ্ধ সবুজ ভুট্টা গাছে ছেয়ে গেছে। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ভুট্টার চাষ হয়েছে পর্যাপ্ত। বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরামের ভুট্টা চাষি নির্মল চন্দ্র রায় বলেন, ভুট্টা চাষে খরচ কম এবং লাভ বেশি একারণে আমরা ভুট্টা চাষ করে আসছি। এবার ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। ভুট্টা চাষে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৫-৭ হাজার টাকা ও বিঘা প্রতি ফলন হয় ৩৩-৩৪ মণ পর্যন্ত। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টা বিক্রি হয় ১৬-১৭ হাজার টাকায়। খরচ বাদে লাভ হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা।
একই ইউনিয়নের অপর এক ভুট্টা চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছি আমরা।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লিলুফা ইয়াছমিন বলেন, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে এবছর ১৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে।
এছাড়াও আমরা প্রণোদনা সহায়তা হিসেবে ৭৮০ জন কৃষককে ২ কেজি করে বীজ, ১০ কেজি করে এমওপি ও ২০ কেজি করে সার বিনা মূল্যে দিয়েছি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সবসময় ও যে কোনো সমস্যায় কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার ভুট্টার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।
নদী বন্দর / পিকে