পরপর তিন ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। আসরের প্রথম ১৪ ম্যাচ শেষে তারাই ছিল একমাত্র অপরাজিত দল। অবশেষে কুমিল্লার চতুর্থ ও আসরের ১৫তম ম্যাচে এসে তাদেরকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দিলো মিনিস্টার ঢাকা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ১৮১ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল ঢাকা। জবাবে আন্দ্রে রাসেল, এবাদত হোসেনদের তোপে ১৩১ রানেই গুটিয়ে গেছে কুমিল্লা। টেবিল টপারদের ৫০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে উঠে গেছে ঢাকা।
১৮২ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রুবেল হোসেনের করা প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন দাস। এক ওভার পর ফাফ ডু প্লেসি (৭ বলে রানআউট হলে বিপদ আরও বেড়ে যায় কুমিল্লার। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও অধিনায়ক ইমরুল কায়েস।
এ দুজনের জুটিতে আসে ৭০ রান, মাত্র ৭.২ ওভারে। ইনিংসের প্রথম স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট পর্যন্ত ৯ ওভারে কুমিল্লার স্কোর ছিল ২ উইকেটে ৭৭ রান। মাশরাফি বিন মর্তুজা, এবাদত হোসেনকে পুল শটে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর শুভাগত হোমের ওভারে টানা চার বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকান মাহমুদুল জয়।
কিন্তু গড়বড়টা হয় টাইম আউট বিরতির পর থেকেই। ইনিংসের দশম ওভারে মাত্র ৫ রান খরচ করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পরের ওভারে প্রথমবার আক্রমণে এসেই জোড়া আঘাত হানেন আন্দ্রে রাসেল। ওভারের প্রথম বলে প্লেইড অন হন ২৮ রান করা ইমরুল। শেষ বলে একইভাবে ফেরেন ৮ চারের মারে ৪৬ রান করা জয়।
একই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি কুমিল্লা। যাও আশা ছিল ক্যামেরন ডেলপোর্টের ব্যাটে। কিন্তু করিম জানাতের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন আগের ম্যাচে ঝড় তোলা এ ইংলিশ ব্যাটার। পরে চেষ্টা করেছিলেন জানাত। এবাদতের বলে আউট হওয়ার আগে ২ ছয়ের মারে ১৭ রান করেন এ আফগান অলরাউন্ডার।
শেষ পর্যন্ত ১৫ বল বাকি থাকতেই ১৩১ রানে অলআউট হয়ে যায় কুমিল্লা। ঢাকার পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। এছাড়া এবাদত হোসেন ও কাইস আহমেদের শিকার ২টি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা আশানুরূপ ছিল না ঢাকার। দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। মোস্তাফিজুর রহমানের ফুল লেন্থের ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ৫ বলে ৬ রান করা শাহজাদ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন তামিম ইকবাল ও ইমরানউজ্জামান।
সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে আগের ম্যাচটিতেই বিপিএল অভিষেক হয়েছিল ইমরানের। তবে কোনো বল খেলার সুযোগ পাননি। আজ নিজের মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই সুইপ করে পাওয়া চারে রানের খাতা খোলেন তিনি। পরের ওভারেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন তিনি। তবে শহিদুল ইসলামের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ ছেড়ে দেন লিটন দাস।
সেই ওভারেই একটি করে চার ও ছয় হাঁকান তামিম। নাহিদুল ইসলামের করা পরের ওভারে নিজের দ্বিতীয় বাউন্ডারি মারেন ইমরান। করিম জানাতকে ছক্কায় ভাসিয়ে ১২ রান তুলে নেওয়ার মাধ্যমে পাওয়ার প্লে শেষ করেন ঢাকার তারকা ওপেনার তামিম। প্রথম ছয় ওভার শেষে ঢাকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৭ রান।
নির্বিঘ্নে পাওয়ার প্লে শেষ করলেও জানাতের করা অষ্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে সোজা আসা এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান ১৫ রান করা ইমরান। এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৩.৩ ওভারে ৩০ রান যোগ করেন তামিম। মনে হচ্ছিল, আসরে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি পেয়ে যাবেন তিনি।
কিন্তু ১১তম ওভারে তানভির ইসলামের বলে ক্রস ব্যাটে খেলে শর্ট মিড উইকেট ফিল্ডারের ধরা পড়ে যান তামিম। আউট হওয়ার আগে ২ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৪৫ রান করেন আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি করা তামিম। এরপর বেশি কিছু করতে পারেননি শুভাগত হোম (৮ বলে ৯), আন্দ্রে রাসেল (৭ বলে ১১) ও নাইম শেখরা (৯ বলে ১০)।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ খেলেন নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। মাত্র ৩৪ বলে ফিফটি পূরণের পর শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪১ বলে ৭০ রান নিয়ে। করিম জানাতের করা শেষ ওভারে হাঁকান দুইটি ছক্কা। সেই ওভার থেকে আসে ২০ রান। ঢাকার ইনিংস থামে ৬ উইকেটে ১৮১ রানে।
নদী বন্দর / জিকে