দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ আর দিনেশ চান্দিমাল বড় জুটিতে বেশ ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। প্রথম দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটার দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটাও প্রায় কাটিয়ে দিচ্ছিলেন অনায়াসে।
অবশেষে ১৩৬ রানের এই জুটিটা ভাঙলেন নাইম হাসান। দিনেশ চান্দিমালকে (৬৬) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন এই অফস্পিনার। ইনিংসের ১১৪তম ওভারের প্রথম বলে চান্দিমালকে আউট করার পর পঞ্চম বলে দারুণ এক ডেলিভারিতে নিরোশান ডিকভেলাকে (৩) বোল্ড করেছেন নাইম।
৪ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানদের ওপর চাপ ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১১৪ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩২৩ রান। ম্যাথিউজ ১৪৪ রানে অপরাজিত আছেন।
প্রথম দিনের প্রথম ও শেষ- দুই সেশনেই দুইটি করে উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম সেশনের পর আসলে সে অর্থে দাপট দেখাতে পারেননি সাকিব আল হাসান, নাইম হাসান, তাইজুল ইসলামরা। প্রথম সেশনে ২ উইকেটে ৭৩, দ্বিতীয় সেশনে বিনা উইকেটে ৮৫ ও শেষ সেশনে ২ উইকেটে ১০০ রান করে শ্রীলঙ্কা। ৪ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে শেষ করে প্রথম দিন।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারাত্নে (৯) বড় কিছু করতে না পারলেও, তার সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করেছেন ওশাদা ফার্নান্দো (৩৬), কুশল মেন্ডিস (৫৪) ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজরা। ক্যারিয়ারের ১২তম ও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিতে ১১৪ রানে অপরাজিত রয়েছেন লঙ্কানদের সাবেক অধিনায়ক ম্যাথিউজ।
দিনের প্রথম সেশনে অবশ্য সফরকারীদের চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই করুনারাত্নেকে ফেরান প্রায় ১৪ মাস পর টেস্টে ফেরা নাইম হাসান। পরে তার হাত ধরেই দ্বিতীয় সাফল্যও পায় বাংলাদেশ। এবার ২২তম ওভারে ওশাদাকে কট বিহাইন্ড করেন তিনি।
নাইমের জোড়া সাফল্যের সেশনে শরিফুলের বোলিংয়ে দুইটি রিভিউও হারায় বাংলাদেশ। ওশাদা আউট হওয়ার ঠিক পরের ওভারে নতুন ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের বিপক্ষে জোরালো আবেদন করেছিলেন শরিফুল। সাড়া দেননি আম্পায়ার। তবে শরিফুল যেনো পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন সেই আউট নিয়ে, তাই নিয়ে নেন রিভিউ।
রিপ্লে’তে দেখা যায়, বলের ইম্প্যাক্ট ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে। তাই রিভিউ হারায় বাংলাদেশ। এর আগে পঞ্চম ওভারেও শরিফুলের বলে রিভিউ হারিয়েছিল স্বাগতিকরা। ওশাদার বিপক্ষে সেই বলের ইম্প্যাক্ট ছিল লেগস্ট্যাম্পের বাইরে। তাই দুইটি রিভিউ-ই হারায় স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয় সেশনে শুরু থেকেই পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। সেশনের প্রথম ১১ ওভারে ৫৫ রান তুলে নেন তারা দুজন মিলে। তখন পর্যন্ত আক্রমণে আনা হয়নি সাকিব আল হাসানকে। অবশেষে ৩৬তম ওভারে বল হাতে নেন, থামান লঙ্কানদের রানের গতি।
সাকিবের সঙ্গে দারুণ হিসেবি বোলিং করেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এ দুজন মিলে টানা ২০ ওভার বোলিং করে খরচ করেন মাত্র ২০ রান। তবে সুযোগ তৈরি করলেও দ্বিতীয় সেশনে মেলেনি কোনো সাফল্য। এই সেশনে মোট ৩২ ওভার খেলে ৮৫ রান নেন কুশল-ম্যাথিউজ।
তবে শেষ সেশনের শুরুর পর প্রথম বলেই কুশলের উইকেট পেয়ে যান তাইজুল। তার খাটো লেন্থের বল টেনে অনসাইডে খেলতে গিয়ে নাইমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন ৫৪ রান করা কুশল। এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি ধনঞ্জয় ডি সিলভা (৬) । সাকিবের বলে ব্যাট-প্যাড হয়ে ক্যাচ আউট হন তিনি। রিভিউ নিয়ে উইকেটটি আদায় করে বাংলাদেশ।
অল্প সময়ের মধ্যে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ভালো কিছু আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দিনের শেষ ভাগে সেই আশায় গুড়েবালি দেন লঙ্কানদের দুই অভিজ্ঞতম ব্যাটার দীনেশ চান্দিমাল ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। দুজন মিলে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ২৪.৪ ওভার খেলে যোগ করেন ৭৫ রান।
ইনিংসের ৮১তম ওভারে তিন বল করার পর দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। নতুন বল নেওয়ার ঠিক পরের ডেলিভারিতেই ফ্লিক করে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাথিউজ। গতবছরের জানুয়ারিতে সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন। প্রায় ১৫ মাস পর বাংলাদেশের বিপক্ষে হাঁকালেন আরেক সেঞ্চুরি।
সবমিলিয়ে বল হাতে নাইমের সাফল্য চার উইকেট। এছাড়া সাকিব ও তাইজুল ফিরিয়েছেন একজন করে ব্যাটারকে।
নদী বন্দর/এসএফ