রোববার সকালে অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে হয়ে রাজধানীর কর্মজীবীরা ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েছেন। যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তিব্র ছিল যে ক্ষেত্রবিশেষে পাঁচ মিনিটের রাস্তা পথ ঘণ্টাতেও পার হওয়া যায়নি। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২১’ উপলক্ষে হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ থাকায় আশাপাশের রাস্তাগুলোতে এই যানজটের সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, মধ্য বাড্ডা, মালিবাগ, আবুল হোটেল, তেজগাঁওয়া, মগবাজার, গুলশান, মহাখালিসহ বিভিন্ন সড়কে যানজটের দৃশ্য দেখা গেছে। তবে বনশ্রী, মালিবাগ আবুল হোটেল, রামপুরা এবং তেজগাঁওয়া অঞ্চলের রাস্তাগুলোতে যানজটের তীব্রতা বেশি দেখা গেছে।
বনশ্রী-রামপুরা অঞ্চলের যানজটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ফেসবুকের একটি গ্রুপে মো. মীর মিলন নামের একজন লিখেছেন, ‘আইডিয়াল থেকে রামপুরা ব্রিজে আসলাম এক ঘণ্টা ২০ মিনিটে। পুরো হাতিরঝিল বন্ধ, একটা মানুষও ঢুকতে দিচ্ছে না।’
মালিবাগ আবুল হোটেল থেকে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটে মেরুল বাড্ডায় আসা রাজধানী সুপার পরিবহনের চালক মো. আলী কদম বলেন, ‘রাস্তায় ভয়াবহ যানজট। ১০ বছরের ওপরে আমি রাজধানীতে গাড়ি চালাচ্ছি। এমন যানজটে আর কখনো পড়িনি।’
তিনি বলেন, ‘আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস। তাই রাস্তায় একটু যানজট থাকবে এটা ধরেই বের হয়েছি। কিন্তু এমন যানজটে পড়তে হবে কল্পনাও করিনি। আবুল হোটেল থেকে মেরুল বাড্ডা আসতে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট লেগেছে। যানজট ধরেই সাধারণ এই রাস্তা আসতে ৩০ মিনিটের বেশি লাগে না।’
বনশ্রী থেকে মোটরসাইকেলে ফার্মগেটের অফিসের উদ্দেশে রওনা হওয়া আরিফুল ইসলাম রামপুরা ব্রিজের ওপর থেকে বলেন, ‘বনশ্রীর এফ ব্লকের বাসা থেকে বের হয়ে ইউলুপ পর্যন্ত আসতেই এক ঘণ্টার ওপরে লেগেছে। ইউলুপ পার হয়ে দেখি হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ। এখন বাড্ডা-গুলশান ঘুরে অফিসে যেতে হবে। ১০টায় অফিস শুরু, ইতোমধ্যে সাড়ে ১০টা বেজে গেছে। অফিস পৌঁছাতে আজ কয়টা বাজবে আল্লাহ্ জানে। রাস্তার যে অবস্থা, ১২টার ওপরে বেজে যাবে মনে হচ্ছে।’
তেজগাঁও অঞ্চল ঘুরে যানজটের দৃশ্য দেখেন নিজস্ব প্রতিবেদক প্রদীপ দাস। তিনি জানান, তেজগাঁওয়া অঞ্চলের প্রতিটি রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি রাস্তাতেই দীর্ঘ সময় ব্যক্তিগত গাড়ি ও পরিবহন দাঁড়িয়ে থাকছে। কেউ কেউ গন্তব্যে পৌঁছাতে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে রওনা দিচ্ছেন।
গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাওয়ার দৃশ্য প্রগতী স্বরণীতেও দেখা গেছে। পায়ে হেঁটে নতুন বাজারের অফিসের উদ্দেশে রওনা হওয়া হৃদয় হাসান নামের একজন আফতাব নগর গেটের সামনে থেকে বলেন, ‘অফিসে মিটিং আছে ১১টায়। যাত্রাবাড়ির বাসা থেকে ৯টায় রওনা দিয়েছি। মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত ভালোভাবেই আসতে পেরেছি। কিন্তু এরপরেই যানজটে পড়তে হয়েছে। মালিবাগ থেকে রামপুরা আসতেই এক ঘণ্টার ওপরে লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম হাতিরঝিল পর্যন্ত আসলে যানজট কমবে। কিন্তু হাতিরঝিল পর্যন্ত এসেও দেখি সামনে একই রকম যানজট। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেটে অফিস যাচ্ছি। এখন পৌনে ১১টা বেজে গেছে। পরিস্থিতি যা, হয়তো আজ মিটিং ধরতে পারবো না। অফিসের অনেকে এমন যানজটে পড়েছেন। স্যারকে যানজটের কথা জানিয়েছি। স্যার বলেছেন দ্রুত অফিসে পৌঁছাতে।’
রামপুরায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথনের কারণে হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে কারণে হাতিরঝিলের ভেতর দিয়ে যে গাড়িগুলো যেত, সেগুলো বাড্ডা দিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে এই রাস্তা গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। এতেই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।’
নদী বন্দর / জিকে