1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
‘ভোট শেষে কেউ আর খবর নেয় না’ - Nadibandar.com
শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ন
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১১ জুন, ২০২২
  • ৭২ বার পঠিত

চেয়ারম্যান-মেম্বাররা ভালো লোক তাই এ রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয় না। ভোট আসলে আমাদের কদর বাড়ে কিন্তু ভোট শেষে কেউ আমাদের খবর নেয় না। জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমরা গত ৫০ বছর ধরে ভোট দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু নাগরিক সুবিধা বলতে যা বুঝায় তা আমাদের ভাগ্যে জোটেনি।

খেদুক্তির সুরে কথাগুলি বলেন মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বৈন্যাতলী ও গোবিন্দপুর গ্রামের সাধারণ ভোটাররা।

গোবিন্দপুর ও বৈন্যাতলি গ্রাম দুটির অবস্থান টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। গ্রাম দুটির উত্তরে বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মটেশ্বর ও সখিপুর উপজেলার হাতিবান্দা এবং পূর্ব পাশে মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর গ্রাম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, গত ৫০ বছর ধরে এই গ্রাম দুটির ভোটাররা শুধু ভোট দিয়েই যাচ্ছেন কিন্তু ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

সংখ্যালঘু অধ্যুাষিত এই গ্রাম দুটিতে ভোটার সংখ্যা চার শতাধিক। পাশাপাশি অবস্থিত গ্রাম দুটিতে নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোমলমতি শিশু কিশোরদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য যেতে হয় প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বংশাই নদী পার হয়ে তরফপুর ইউনিয়নের তরফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গ্রাম দুটির ৬০/৭০জন শিক্ষার্থী তরফপুর গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী মাঝপথেই লেখাপড়া বন্ধ করে দেয় বলে গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন।

অন্যদিকে হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম দুটিতে কেউ মারা গেলে বর্ষায় তাদের সৎকার করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ বর্ষার সময় রাস্তা ও নিচু শ্মশান ঘাটটি পানিতে তলিয়ে যায়। ভৌগলিকভাবে নিচু এলাকা হওয়ায় জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত গ্রাম দুটির শিশু কিশোরদের রাস্তার অভাবে পানি ভেঙে অথবা নৌকা ও ভেলাযোগে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। গ্রাম দুটির এই চিত্র যুগ থেকে যুগান্তরের বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন।

এ ছাড়া পাথরঘাটা এবং রামপুর খেয়াঘাট থেকে গ্রাম দুটির যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় এলাকার কৃষকরা তাদের ফসলের নায্য মূল্যও পান না। আগামী ১৫ জুন ফতেপুর ইউনিয়নসহ এ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোট উপলক্ষে বরাবরের মতো দুই গ্রামের ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকেরা প্রতিনিয়তই ধর্ণা দিচ্ছেন। এমনকি রাতেও প্রার্থীদের পদচারণার কারণে ঠিকমত ঘুমাতে পারছেন না গ্রামবাসী। সকলেই রাস্তা নির্মাণসহ নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।

গ্রাম দুটি সরেজমিন পরিদর্শনকালে গোবিন্দপুর গ্রামের খুশিমোহন সরকার, মদন মন্ডল, নিরু মন্ডল, লালচান সরকার, তাপস সরকার, বৈন্যাতলি গ্রামের হরিনাথ মন্ডল, সুবল মন্ডল, মহাদেব মন্ডল, যতিশ মন্ডল জানান, আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দেখে নয়, আমরা নৌকা মার্কায় ভোট দেই। প্রতি নির্বাচনের আগে সবাই আসেন এবং নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট গেলে আর কারও দেখা মেলে না।

গোবিন্দপুর গ্রামের উষা রানী মন্ডল, উজ্জল রানী মন্ডল, বৈন্যাতলি গ্রামের অর্চণা মন্ডল জানান, নৌকাযোগে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। এ কারণে অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

গোবিন্দপুর গ্রামের শুকলাল সরকার, স্বপ্না সরকার বৈন্যাতলী গ্রামের রবিন্দ্র মন্ডল, কৃষ্ণ মন্ডল ও পুষ্প মন্ডল বলেন, ফতেপুর ইউনিয়নের শুতানরি গ্রাম থেকে তাদের গ্রামের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। এ ছাড়া রামপুর খেয়াঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার। রাস্তাটি নিচু হওয়ায় বছরের প্রায় সাত মাস থাকে পানির নিচে।

গ্রামবাসীর যাতায়াতের জন্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম হাসমত আলী রাস্তাটি নির্মাণ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদের নৌকায় করে দেড় কিলোমিটার শুতানরি ভোট কেন্দ্রে এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রায় তিন কিলোমিটার ফতেপুর কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হয়। আমরা গ্রামবাসী ভোটের সময় নিজেদের দায়িত্ব পালন করে থাকি। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হবার পর কেউ তাদের খবর রাখেন না।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী, আমীর হোসেন লেবু ও মরহুম শাজাহান মিয়া বলেন, মাটি ফেলে চলার উপযোগী করলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকা ও ভেলা ছাড়া পারাপারের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু পরে আর কেউ সেই একমাত্র রাস্তার উন্নয়নের জন্য এক ঢালি মাটিও ফেলেনি।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন তালুকদার বলেন, এ এলাকার মানুষ আমাকে কৃষ্ণ বলে ডাকেন। গোবিন্দপুর ও বৈন্যাতলী গ্রামের রাস্তার উন্নয়ন বা সংস্কার কাজ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ১৫ জুন নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে রাস্তাটি পাকা করে দেব।

ফতেপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম সিকদার বলেন, ঘটনাটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও গ্রাম দুটিতে যাতায়াতের এই দুরবস্থা বেশ পীড়াদায়ক।

বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুর রউফ বলেন, কোদাল এবং টুপড়ি দিয়ে মাটি ফেলে রাস্তা করা সম্ভব নয়। প্রকল্পের মাধ্যমে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই রাস্তা করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

নদী বন্দর/এসএফ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com