জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণে ডাকটিকেট অবমুক্ত করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার রোববার (১০ জানুয়ারি) তার দফতরে এ বিষয়ে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট ও ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন।
একইসঙ্গে ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী এ বিষয়ক একটি সিলমোহর ব্যবহার করেন। তিনি দিবসটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছেন।
১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিস্মরণীয় একটি দিন। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু। তিনি ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের মহান বিজয় পূর্ণতা পায়। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বাংলাদেশ প্রবেশ করে আলোকিত অভিযাত্রায়।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত নির্দেশনায় বাঙালি একদিকে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে কবরের পাশে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তার বিস্ময়কর নেতৃত্বের ক্ষমতায় বিশ্ব নেতাদের কাছেও অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন, বাঙালিকে গৌরবান্বিত করেছেন।
‘বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড হিথ ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন। প্রধানমন্ত্রী হিথ বঙ্গবন্ধুকে নজীরবিহীন সম্মান দেখান। ওই দিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ নিজে তার কার্যালয়ের বাইরে এসে যতক্ষণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গাড়ী থেকে বেরিয়ে না এলেন ততক্ষণ গাড়ীর দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ফেরার পথে বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে দিল্লীতে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে আসার খবর শুনে দিল্লি বিমানবন্দরের পাশে হাজার হাজার ভারতীয় নারী-পুরুষ বঙ্গবন্ধুকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। সেখানে বক্তব্য রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বিদেশের মাটিতে বক্তৃতাররীতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সেদিন ইংরেজিতে ভাষণ শুরু করে ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান…’ বলতে না বলতেই উপস্থিত হাজার হাজার ভারতীয় দর্শক একসঙ্গে সমস্বরে চিৎকার করে তাকে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ করতে থাকেন। জনতার দাবির মুখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্মিত হেসে বলেন, ‘দে নিড বেঙ্গলি’। তিনিও বঙ্গবন্ধুকে বাংলায় বক্তৃতা করার আহ্বান জানান। এরপর বঙ্গবন্ধু ‘ভাই ও বোনেরা’ বলতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারতের অভ্যর্থনা সভার জনস্রোত।
নদী বন্দর / জিকে