ভূমিকম্প বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) থেকে ত্রাণ পৌঁছানো শুরু হয়েছে। তবে দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত সড়কের অভাবে দুর্যোগকবলিতদের সহযোগিতা করতে গিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে ত্রাণকর্মীদের। খবর রয়টার্সের।
বুধবার (২২ জুন) ভোররাতে মানুষজন ঘুমিয়ে থাকার সময় আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে আঘাত হানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার প্রবল ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের খোস্ত শহরে এবং কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৪ কিলোমিটার গভীরে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পটিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকতিকা প্রদেশ। সেখানে মারা গেছেন প্রায় এক হাজার মানুষ, আহত হয়েছেন অন্তত দেড় হাজার। ধ্বংস হয়ে গেছে তিন হাজারের বেশি ঘরবাড়ি।
পাকতিকার শীর্ষ তালেবান কমান্ডারের মুখপাত্র মোহাম্মদ ইসমাইল মুয়াবিয়া টেলিফোন নেটওয়ার্কের বিষয়ে বলেন, আমরা ওই এলাকায় যোগাযোগ করতে পারছি না। নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল। আমরা সবশেষ তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছি।
আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফত জামান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় এক হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। ত্রাণ পৌঁছেছে এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে আরও সহায়তা প্রয়োজন।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি গয়ান শহরের পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিল রয়টার্সের একটি প্রতিনিধি দল। তারা জানিয়েছে, সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাটির তৈরি বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। শহরের কিছু রাস্তায় তালেবান সদস্য ও অ্যাম্বুলেন্সের ভিড় দেখা গেছে। হেলিকপ্টারগুলো আকাশপথে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। এক জায়গায় অন্তত ৩০০ বাসিন্দাকে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
অভূতপূর্ব সংকট
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা তালেবান প্রশাসনের সামনে অগ্নিপরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত আগস্টে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ। এর ফলে দেশটিতে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।
গত মার্চে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুরাপুরি ধসে পড়েছে। দেশটির জন্য আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে সহায়হার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।
গুতেরেস বলেন, আফগানিস্তানে খরার কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ৯০ লাখ আফগান দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। কিছু পরিবার বেঁচে থাকার জন্য শিশু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) আফগানিস্তানের ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় খাদ্য ও রসদ পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। দেশটিতে ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর গর্ডন ক্রেগ বলেন, আফগান জনগণ কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাত, তীব্র খরা ও অর্থনৈতিক মন্দায় আগে থেকেই অভূতপূর্ব সংকটের মুখোমুখি। ভূমিকম্প সেখানে মানবিক চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেবে, যা তারা প্রতিদিনই সহ্য করে চলেছে।
এরই মধ্যে আফগানিস্তানের জন্য সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বেশ কিছু দেশ।
আফগানিস্তান খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে দেশটিতে ভূমিকম্পে সাত হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ভূমিকম্পে প্রতি বছর আফগানিস্তানে গড়ে ৫৬০ জন মারা যান ।
নদী বন্দর/এসএফ