দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর তিন দিকে মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও ইলিশা নদীবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলা। এ জেলায় প্রায় দুই লাখ জেলে ইলিশ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাস হচ্ছে ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু এ বছর জ্যৈষ্ঠ শেষ হয়ে আষাঢ়ের অর্ধেক চলে গেলেও নদীতে ইলিশের দেখা নেই।
হাজার হাজার টাকা খরচ করে নদীতে গিয়ে দু-চারটি ইলিশ নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে জেলেদের। এতে তাঁদের খরচ উঠছে না। তাই অনেক জেলে নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। নদীতে মাছ না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন তাঁরা।
তবে ভোলা জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ভোলায় এক লাখ ৭৫ হাজার ৩৯০ টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর এক লাখ ৮২ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে মৎস্য বিভাগ।
সরেজমিনে ভোলার বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও অনেক ঘাটে বেকার সময় পার করছেন জেলেরা। কিছু কিছু জেলে নদীতে গেলেও ফিরছেন শূন্য হাতে। দু-চারটি ইলিশ মিললেও খরচের টাকা উঠছে না। দীর্ঘদিন লোকসানের মুখে পড়ে অনেকে এখন জেলে পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ঘাটের আড়তগুলোতেও তেমন কোনো কর্মব্যস্ততা নেই। আড়তদাররা বসে বসে অলস সময় পার করছেন।
তুলাতলী মাছঘাটের জেলে ফরিদ মাঝি জানান, গত ৩০ এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা নেই। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ করে পাঁচজন মাঝি-মাল্লা নিয়েও ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। এতে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর দিন দিন ঋণের বোঝাও ভারী হচ্ছে।
ভোলার খাল মাছঘাট এলাকার ৭০ বছর বয়সী শাজাহান মাঝি জানান, ভরা মৌসুমে নদীতে মাছ না থাকার কারণ হলো—নদীতে অবৈধ জাল। বছরজুড়ে নদীতে অবৈধ খুঁটি জাল, চর ঘেরা জাল, পাই জাল, বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছের ছোট ছোট পোনা ধ্বংস করছেন অসাধু জেলেরা। তাই মাছের উৎপাদন বাড়াতে হলে নদী থেকে এসব অবৈধ জাল অপসারণের পাশাপাশি অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
তুলাতলী মাছঘাটের আড়তদার মো. ইউনুছ জানান, এ ঘাটে ১২টি আড়ত রয়েছে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন এ ঘাট থেকে ১৫-২০ লাখ টাকার মাছ ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকামে পাঠানো হতো। কিন্তু ১৫-২০ দিন ধরে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ টাকার মাছ মোকামে পাঠাতেও কষ্ট হয়। মাছ না পাওয়ায় অনেক জেলেই এখন নদীতে যাচ্ছে না।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ জানান, আগামী মাস থেকেই নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাবে। এত দিন জেলেদের যে ক্ষতি হয়েছে, তখন তা পুষিয়েও নিতে পারবেন তাঁরা। গত বছরের চেয়ে এ বছর ইলিশের উৎপাদন আরো বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
নদী বন্দর/এসএফ