দখলদারদের দৌরাত্মে ও নাব্যতা হারিয়ে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার শহরের বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া শালকি নদী। বছরের প্রতিটি দিন বহমান স্রোত ধরে রাখা এ নদীটি এখন যেন কালের সাক্ষী হিসেবে খালে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে নদীটিকে দখলে নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করায় সংকুচিত হয়েছে এর আকার। কোথাও কোথাও আবার মাটি ফেলে নিজের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায় শালকি নদী সুরক্ষার জন্য রিভারাইন পিপলের ১৫ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু ওই কমিটির কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনা। শুধুমাত্র নদী দিবস এলে নদীপাড়ে এসে একটি মানববন্ধন করে কমিটির লোকজন চলে যায়।
রবিবার (১৭ জুলাই) সরেজমিনে দেখা গেছে, ডোমার শহরের সাথে লাগানো নদীটি। বড় রাউতা গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বুড়ারডোবা খুলখুলির পুল থেকে উৎপত্তি হয়ে ডোমার সদর ইউনিয়নের বড়রাউতা, ছোট রাউতা ও পৌর এলাকার কোল ঘেঁষে শালকি নদীটি গিয়ে মিলিত হয়েছে দেওনাই নদীতে। আগের শালকি আর এখনকার শালকি দেখলে মনেই হবে না এটি একটি প্রবাহমান নদী ছিল।
উৎপত্তিস্থল থেকে শেষ মাথার বিভিন্ন অংশ অবৈধ দখলে যাওয়ায় নদীর মালিকানা অনেকটা দখলদারের কবলেই রয়েছে। পানি প্রবাহ না থাকায় যেটুকু আছে সেটুকুও হারিয়ে যাচ্ছে মানচিত্র থেকে। এতে করে পরিবেশের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আগামী প্রজন্মের কাছে নদী শব্দটি মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের পাতা থেকে। এ নদীকে গ্রাস করেছে কতিপয় প্রভাবশালী দখলদার।
ময়লা-আবর্জনা বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি স্থাপনা নির্মাণ করে যে যেভাবে পেরেছে দখলে নিয়েছে। সবখানে দেখা যাচ্ছে দখলেন চিহ্ন।নদী পাড়ের বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন এইতো সেদিনের কথা। নদী চব্বিশ ঘণ্টা পানিতে টইটুম্বুর থাকতো। নদীর স্বচ্ছ পানিতে গোসল করতো মানুষ। কিন্তু এখন নদীটি তার যৌবন হারিয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নদীর কোনো কোনো স্থানে বেড়া দিয়ে ভাগ করে রাখা হয়েছে। মনে হয়েছে জায়গাটি ব্যক্তি মালিকানার হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও মাটি ভরাট করে ঘর নির্মাণ আবার কেউ দোকান আবার কেউ ক্লিনিক হিসেবে ব্যবহার করছে।
আবার প্রায় সব ক্লিনিকের ময়লা আর্বজনা ছাড়াও শহরের ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। নদীর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে চিলাহাটি যাওয়ার রেললাইন নদী ভরাট হওয়ায় রেল সেতুর কিছু জায়গার মাটি ভেঙে ধসে সুরঙ্গ তৈরি হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি নদী।
স্থানীয়রা মনে করেন, উপজেলা শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় পানিতে নিমজ্জিত থাকেন ডোমার পৌরবাসিন্দারা। বিশেষ করে একটু বৃষ্টি হলে গোটা শহর তলিয়ে যায়। বর্ষার সময়ে তো দুর্ভোগের শেষ নেই। এ কারণ হিসেবেও নদীর নাব্য হারানো এবং সংকুচিত হওয়ার বিষয়টিকে দেখছেন স্থানীয়র।
এলাকার প্রবীন ব্যবসায়ীরা বলেন, শালকি নদীকে কেন্দ্র করেই চলতো ডোমারের ব্যবসা বাণিজ্য। এক সময় যে নদীর ওপর দিয়ে নৌকায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো। শালকি নদীটি এ শহরের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে নদীটিকে ব্যবহার করে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা যায়।
শিক্ষক জুলফিকার আলীর মতে নদীটি সংস্কার করে দুই পাড় দিয়ে ছোট রাস্তা তৈরি করলে মানুষের চলাচলের উপযোগী হবে। ফলে নদীটি তার সৌন্দর্য ফিরে পাবে। তিনি জানান, শালকি নদীকে বলা হয় ডোমারের প্রাণ। এই নদীকে পরিকল্পনা করে ব্যবহার করলে ডোমারবাসীকে আর পানিবন্দি হয়ে থাকতে হবে না।সচেতন মহল বলছেন, নদীটি রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব গত কয়েক বছর জেলার সব নদী খনন হলেও অজ্ঞাত কারণে এই নদীটি খনন করা হয়নি। নদীটি সংস্কার না করায় দিনে দিনে মাটি ভরাট হয়ে মরা খালে পরিণত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারীর বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান জানান, শালকি নদী খননের বিষয়ে আমরা আড়াই কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।বরাদ্দ পেলে এটি দ্বিতীয় পর্যায়ে খননের প্রক্রিয়ায় আনা হবে।
নদী বন্দর/এসএফ