গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাদকের হাট ও ক্রাইম জোন তালিকায় টঙ্গী পূর্ব এবং পশ্চিম থানা এলাকা। কয়েক যুগ ধরে এই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে টঙ্গীর মাজার বস্তি, মরকুন, এরশাদ নগর, মধুমিতাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তালিকাভুক্ত একাধিক মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। র্যাবের পাশাপাশি থানা পুলিশও মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযান করে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করে আসছে।
একাধিক সূত্রে জানা জায়, টঙ্গীর মাদক পরিচালনায় কাজ করছে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা। এর মধ্যে অধিকাংশ মদতদাতার বসবাস টঙ্গী রেল জংশনের চারপাশে। ফলে টঙ্গীর মাদক নির্মূল করতে প্রশাসনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
মাদক ব্যবসায়ীরা প্রশাসনিক মদতের জন্য সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করে ত্যাগী নেতাকর্মীদের জায়গা দখল করে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। টাকার বিনিময়ে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের পদপদবি নিয়ে এলাকায় মাদকের রাজত্ব গড়ে তুলেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিন জানা যায়, টঙ্গীর ১৯ বস্তিতে গোপনে এবং প্রকাশ্যে মাদক কেনাবেচা হচ্ছে।
এর মধ্যে টঙ্গী বাজারের মাজার বস্তি, টঙ্গী ব্যাংকের মাঠ ফেনসিডিল পল্লি, কেরানীটেক বস্তি, এরশাদ নগর (বাস্তহারা) বস্তি, বনমালা রেল গেট, মিলগেট নামা বাজার বস্তি, মরকুন, পাগাড় ঝিনু মার্কেট, মধুমিতা রেললাইন, আরিচপুর শেরেবাংলা রোড, মধুমিতা তিনতলা মসজিদ মোড়, বউ বাজার রেললাইন ও টঙ্গী নদী বন্দর বর্তমানে মাদক কেনাবেচায় শীর্ষে। আরো আছে আউচপাড়া, দত্তপাড়া, গাজীপুরা সাতাইশ রোড, হিমারদিঘী মেঘনা রোড ও চেরাগআলী। এই পয়েন্টগুলোতে দিনে রাতে বিক্রি হচ্ছে, ইয়াবা, ফেনসিডিল, প্যাথিড্রিন, গাঁজাসহ নানান ধরনের মাদক।
সন্ধ্যার পর দেখা যায়, এই সকল এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের আস্থাশীল হতে টঙ্গী রেল জংশন এলাকায় জমায়েত হয়ে তাদের সঙ্গে ছবি তুলে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচার করে নিজেদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দাবি করে আসছেন। এতে স্থানীয় প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করতে হিমসিম খাচ্ছে। এদের মধ্যে স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতাকে মাদকসহ গ্রেফতার ও করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত ১০ বছর মাদক ব্যবসা করে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে এখন মদত পাওয়ার জন্য সরকারদলীয় রাজনীতিতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। রেল জংশনের চারপাশে বসবাসকারীদের মধ্যে যুব নেতা, ছাত্রলীগ নেতা, প্রভাবশালী নেতার আস্থাভাজন ব্যক্তিরা কয়েক বছরে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য যুবও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে আসছেন। জনসভা এবং ঘরোয়া আলোচনাসভায়ও তিনি মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। তাকে বিতর্কিত করতে দলীয় কর্মী পরিচয়ে গোপনে মাদক ব্যবসায়ীদের মদত দিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন নেতা।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি অপরাধ দক্ষিণ) ইলতুত্ মিশ জানান, ‘প্রতিদিনই আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছি। ঘনবসতি এবং একাধিক বস্তি থাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতি মাসে মাদকের অনেক মামলা হলেও মূল মাদক ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক প্রভাবশালী হওয়ায় প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ফলে ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও মদতদাতারা থাকে অধরা।
নদী বন্দর/এসএস