তিস্তা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ভাঙন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। ভাঙন আতঙ্কে অসংখ্য পরিবার বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিস্তার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, খুনিয়াগাছ উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি।
উপজেলার পূর্ব কালমাটি গ্রামের মিনু বেওয়া বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার ১২ বছর অনেক কষ্টে সন্তানদের মানুষ করেছি। তিস্তা ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির কাছে চলে এসেছে। কবে যে বাড়িটি ভেঙে নিয়ে যায় সে দুশ্চিন্তায় রাত কাটাচ্ছি। কালমাটি গ্রামটি অনেক বড় ছিল। তবে সবাই ভিটেমাটি হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন।’
তিস্তাপাড়ের হাজেরা বেগম বলেন, ‘বসতবাড়ি হারিয়ে মানুষের জমিতে আশ্রয় নিয়ে আছি। সেখানেও তিস্তা হানা দিয়েছে। এখন কোথায় যাবো? মরণ ছাড়া কোনো বুদ্ধি নাই।’
ভাঙনের শিকার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, ‘বাড়িভিটে নদীগর্ভে চলে গেছে। শুধু ঘরের কিছু মালামাল নিয়ে উঁচু স্থানে চলে এসেছি। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো, কি করবো এ চিন্তায় আছি।’
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মফিজার রহমান বলেন, ‘উপজেলার সদর ইউনিয়নের ১ এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের চিলমারী পাড়ার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক পরিবার। তারা বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে চর সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, এ বছর তিস্তাপাড়ের প্রায় ৩০টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। পরিবারগুলোকে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, প্রতিবছর তিস্তায় ভাঙন দেখা দেয়। তবে এ বছর কিছুটা ভাঙন কমেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
নদী বন্দর/এআরকে