টানা পাঁচ দিনের জোয়ারে ভোলার তিনটি ইউনিয়নের শতাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে চরম সংকটে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর ও ঘেরের মালিকরা। আর্থিকভাবে লোকসানের মুখে পড়া এসব মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি ইউনিয়নের অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ করে মাছের চাষ করেছিলেন। ঘের ভেসে যাওয়ায় এখন এসব মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সামনের দিনগুলোর চিন্তায় দিশেহারা তারা। এদিকে মৎস্য বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী করা হলেও কবে নাগাদ তারা সহায়তা পাবেন তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত পাঁচ দিন ধরে মেঘনার পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আর এতেই অতি জোয়ারে তলিয়ে গেছে ভোলা সদরের রাজাপুর, ধনিয়া ও ইলিশা ইউনিয়নের শতাধিক পুকুর ও ঘের।
কন্দকপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ ঘেরের মালিক মো. মতিন বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে আমার পাঁচ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’
৫০ হাজার টাকার মাছ ভেসে যাওয়া তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এনজিও খেকে ঋণ নিয়ে পুকুরে মাছের পোনা ছেড়েছিলাম। কিন্তু সব ভেসে গেছে।’
নুর নাহার বেগম ও মনিরুল ইসলামের পুকুরও ভেসে গেছে। তারা জানালেন, লাভের আশায় কিছুদিন আগে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করি। কিন্তু সেই মাছ মেঘনার জোয়ারে ভেসে গেছে। লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের।
একই কথা জানালেন খাদিজা বেগম ও রোজিনা আক্তার। তারা জানান, কিছুদিনের মধ্যে মাছ বিক্রির কথা ভাবছিলাম। কিন্তু জোয়ার সব শেষ। এখন কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় আছি।
রাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হারুন বলেন, ‘পুরো রাজাপুর ইউনিয়নের অর্ধশত ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত। জোয়ারের পানির এতো চাপ বেড়েছে রাস্তাঘাটও ভেঙ্গে গেছে। পুকুর, ঘের ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
উপকূলের এসব মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস ছিলো মাছ চাষ কিন্তু সেই মাছই যেন তাদের দুঃখ-গাথা। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থদের দ্রুত সহায়তার দাবী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।
পূর্ব ইলিশা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটন বলেন, ‘জোয়ারে আমার এলাকার বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ, বিশেষ করে আমনের বীজতলা এবং পুকুর-ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তায় দ্রুত সরকারি সহায়তার প্রয়োজন।’
ভোলা সদর সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন বলেন, ‘জোয়ারে অনেক পুকুর এবং ঘেরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তালিকা তৈরী করে ঊদ্র্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করবো। তাদের জন্য যদি কোন সহায়তা আসে তাহলে তা দ্রুত তা বিতরন করা হবে।’
নদী বন্দর/এআরকে