কুড়িগ্রামের তিস্তা-ধরলা-ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে থাকলেও দুদিন ধরে তা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যার আশঙ্কা না থাকলেও নদীর তীরবর্তী মানুষ ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি নিয়ে পড়েছে বিপাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে নদীভাঙনের শঙ্কায় বাঁশের ঝাড়, সুপারির গাছ, বেলগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা কেটে বিক্রি করছে স্থানীয়রা। কেউবা ঘরবাড়ি ভেঙে নিচ্ছে স্বজনদের উঠানে। যাদের অর্থ সম্পদ বলতে কিছু নেই তারা আশ্রয় নিচ্ছেন রাস্তার ধারে কিংবা খোলা আকাশের নিচে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসল্লিপাড়া, সরকারপাড়া, ব্যাপারীপাড়া, রসুলপুর ও বথুয়াতলী গ্রামের প্রায় ১৫০ বাড়ি ও শত বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকাবাসীর।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসুল্লি পাড়ার মাহাবুব রহমান বলেন, ভিটেমাটি নদীতে গেছে। ভাঙাচুরা মালপত্র নিয়ে কোনো রকমে আত্মীয়ের জমিতে ঠাঁই নিয়েছি। হয়তো দু একমাস সেখানে থাকতে পারবো। এরপর জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য নেই। কোথায় যাবো সে চিন্তায় ঘুম আসে না।
ওই এলাকার মতিয়ার রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নদী খুব ভাঙতেছে। গাছপালা ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমার বাড়িও ভেঙে গেছে। গরু ছাগল নিয়ে পড়েছি দুশ্চিন্তায়। নিজের ঠাঁই হচ্ছে না পশুগুলো রাখি কোথায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জালাল মিয়া বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়লেও নদী ভাঙে, পানি কমলেও নদী ভাঙে। এখানকার মানুষের দুঃখ সারাবছর থাকে। তবে গত এক সপ্তাহে মুসল্লী পাড়া গ্রামের ১৫ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। তাদের মধ্যে ৩-৪ জনের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের জায়গা জমি নেই। স্থানীয়রা কোনো রকমে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ইউনিয়নের বেশিরভাগ অংশ ব্রহ্মপুত্রের তীরে। ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১৫০ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যাপারী পাড়া গ্রামে শুধুমাত্র এক হাজার জিও ব্যাগ দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের নদী ভাঙনের বিষয়টি সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। ওখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেটিও নদী ভাঙনের মুখে। ওখানে ভাঙন রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।
নদী বন্দর/এসএইচ