সমাবেশের নামে বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, সমাবেশের নামে চাঁদাবাজি করে যে টাকা তোলা হচ্ছে তার অর্ধেক লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হচ্ছে।
রোববার (১৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। সেটি ছিল সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ। সেই সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আমাদের নেত্রীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সেই হামলা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে সেই হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, শাহ এ এম এস কিবরিয়ার জনসভায় হামলা হয়েছিল, আহসানউল্লাহ মাস্টারের সমাবেশে হামলা হয়েছিল, শেখ হেলালের সমাবেশে হামলা হয়েছিল, বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাবেশে হামলা করা হয়েছিল, ঢাকাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা হয়েছিল।
বিএনপি এখন যে সমাবেশ করছে কোথাও কি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে? ঘটেনি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের অফিসের দুই পাশে স্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া থাকতো। সেই বেড়া ডিঙিয়ে কেউ যেতে পারতো না, দু’পাশে পুলিশ থাকতো। এখন কি সে ধরনের ঘটনা আছে? ওরা তো মিছিল নিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় যায়।
হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন বিএনপি হচ্ছে পেট্রল বোমা বাহিনী, বিএনপি হচ্ছে তারা, যারা মানুষের সম্পত্তিতে আগুণ দেয়, গাড়ি ভাঙচুর করে। চট্টগ্রামের সমাবেশেও সন্ত্রাসীদের সমাবেশ ঘটিয়েছিল। এজন্য পুলিশ সন্ত্রাসী কার্যক্রম এড়াতে রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী তল্লাশি করেছে। তারা যে সমাবেশ করছে, সেগুলো তো নির্বিঘ্নে সব জাগায় হচ্ছে।
‘এই সমাবেশের নামে সারাদেশে চাঁদাবাজি করছে। চট্টগ্রামে সমাবেশের নামে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে চাঁদা নিয়েছে। ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার জন্য তারা একটা বিরাট চাঁদাবাজির প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমাবেশে যে চাঁদা উঠেছিল তার একটা অংশ লন্ডনে তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সমাবেশের নামে বিএনপির একটি বড় চাঁদাবাজির প্রকল্প হচ্ছে এটি। আমি শুনতে পেলাম চট্টগ্রাম সমাবেশে যে চাঁদা উঠেছিল তার অর্ধেক টাকা তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। আর বিএনপি সমাবেশ নিয়ে বাধার কথা বলে, আমি তাদের একটু পেছন ফিরে তাকাতে বলবো।
তিনি বলেন, বিএনপি যাতে ভালোবাবে সমাবেশ করতে পারে, সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমাবেশের নামে তারা অতীতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জনজীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে। সেজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে হয়। আর সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে যানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেটির স্বার্থে অনেক ক্ষেত্রে তল্লাশি করতে হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যার স্বীকৃতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের প্রস্তাবের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন জাতিসংঘ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন ঘটনা পৃথিবীর কোথাও ঘটেনি।
তিনি বলেন, উগান্ডার গণহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তার থেকে অনেক বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৯৭১ সালে। এটার স্বীকৃতি অবশ্যই হওয়া উচিত। সেজন্য বিভিন্ন জায়গায় অর্থাৎ ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাতিসংঘ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসা হচ্ছে। সেটার প্রতিফল হচ্ছে মার্কিন কংগ্রেসে, মার্কিন প্রতিনিধি সভায় এ প্রস্তাব উপস্থাপন। সেজন্য মার্কিন কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানাই এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানাই। আশা করি এ অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২৫ মার্চ বা ১৯৭১ সালের গণহত্যার স্বীকৃতি জাতিসংঘ কর্তৃক আমরা পাবো।
নদী বন্দর/এসএইচ