1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
কমছে ফলন মরছে গাছ, নারিকেলে সবাই হতাশ - Nadibandar.com
সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রাকসু হল সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৯ জন নির্বাচিত গণতন্ত্র চর্চা অব্যাহত থাকলে স্বৈরশক্তি মাথাচাড়া দিতে পারে না: মির্জা ফখরুল আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো: সাবেক এমপি সাইফুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ আজ ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে ইসলামি সামরিক জোট চায় ইরাক ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরও ৫৩ ফিলিস্তিনির গণতন্ত্র রক্ষার মূল্য মানুষের জীবন ও কল্যাণের চেয়ে বেশি নয়: তারেক রহমান তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, খোলা হলো সব জলকপাট নতুন শর্তে চাপের মুখে ঐকমত্য কমিশন বাঁশবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কা, প্রাণ গেল পুলিশের এসআইসহ ৩ জনের ভাঙ্গায় অবরোধের ঘটনায় ২৪০ জনের নামে মামলা
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ৯৭ বার পঠিত

দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল নারিকেল। এক সময় গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশি নারিকেল গাছ ছিল। এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছিল অনেক ছোটখাট শিল্প। তবে ইদানিং নারিকেল ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, কমছে ফলন, মরছে গাছ। ফলে ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা সবাই এখন নারিকেল নিয়ে বেশ হতাশ।

বাঙালি সমাজের মানুষেরা রসনা বিলাসী। ফল হিসেবে নারকেলের যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি মসলা হিসেবেও জনপ্রিয় নারকেল। আচার অনুষ্ঠানে ভারী খাবার তৈরিতে বিশেষ করে মাংস রান্নায় নারকেল ব্যবহার করা হয়। আবার সনাতন ধর্মালম্বীরা নিয়মিত পুজোর উপকরণ হিসেবে নারকেল ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া শিরনি, ফিরনী, হালুয়াসহ নানান রসালো নাস্তা তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় নারকেল। এসবক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় পরিপূর্ণ বয়স্ক নারকেলের। স্থানীয় ভাষায় যাকে ‘ঝুনা নারকেল’ বলে। স্বাভাবিকভাবে সারাবছরই নারকেলের চাহিদা থাকে। তবে শীতকালে নারকেলের যোাগান কমে যায়। ফলে বছরের এই সময়ে নারকেলের দাম বাড়ে।

বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা গেছে নারকেলের দাম বাড়ার কারণ। ফরিদ আহমদ নামের আড়তদার বলেন, “এখন মানুষ নারিকেল ঝুনা হতে দেয় না। ডাব থাকতেই বিক্রি করে দেয়। এতে ঝুনা কিংবা শুকনো নারকেলের যোগান কমে যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরেই দাম বেড়েছে। প্রতি পিস নারকেল আকারভেদে ১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

সাধারণত বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে নারিকেল বেশি উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার। এছাড়াও কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত উপকূলীয় দ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছিল বিশাল নারিকেল বাগান। যে কারণে দ্বীপটির স্থানীয় জনপ্রিয় নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’। কিন্তু  দক্ষিণাঞ্চল থেকে শুরু করে নারিকেল জিঞ্জিরা হিসেবে পরিচিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও গত কয়েক বছর ধরে নারিকেল গাছে ফলন নেই, নানান রোগে মরে যাচ্ছে গাছগুলো।

উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা তথা দক্ষিণাঞ্চলে মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা, ঘূর্ণিঝড় সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সঠিক পরিচর্যার অভাব, পোকা মাকড়ের আক্রমণ, ভাইরাসের সংক্রমণসহ নানা কারণে নারিকেল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

গত কয়েক বছরে এসব অঞ্চলে নারিকেলের ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিশেষ করে কম বৃষ্টিপাতের করণে নারকেল গাছে ডাব ধরে তা শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। ফলে ডাব ও নারিকেলের মূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

শীতকালে পিঠার অন্যতম উপকরণ নারিকেল। পিঠা তৈরির জন্য নারিকেল কিনতে খুলনার বড় বাজারে এসেছেন ক্রেতা মনিরুল ইসলাম। নারিকেলের আকাশ ছোঁয়া দাম শুনে আঁতকে উঠেছেন তিনি।

এক সময়ের ২০ থেকে ৪০ টাকা দরের নারিকেল এখন আকার ভেদে প্রতি পিস ১২০ থেকে ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এত দাম হলে পিঠা খাওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব হবে না বলে হতাশা প্রকাশ করলেন তিনি।

স্থানীয় নারিকেল বিক্রেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সময় ডাবের দাম ও চাহিদা ছিল অনেক বেশি। যে কারণে অনেকে নারিকেল শুকাতে পারেনি। বেশি দাম পাওয়ায় ডাব বিক্রি করেছেন সবাই। এতে বাজারে শুকনো নারিকেলের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাছাড়া পূর্বের তুলোনায় এ অঞ্চলে এখন ফলন অনেক কম। কোথাও কোথাও শুনেছি গাছ মরে যাচ্ছে।

ফরিদপুর জনতা ব্যাংকের সামনে থেকে কথা বলেন কার্তিক চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, “প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিটি পূজাতে হিন্দু বাড়িতে নাড়ু ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। মিষ্টি ও মুখরোচক খাবারগুলো সঙ্গে নাড়ু সমান প্রিয়। তাই পূজা উৎসবের খাবারের তালিকায় থাকতে হয় বিভিন্ন রকম নাড়ু। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় শারদীয় দূর্গা পূজায় খাবার-দাবারের তালিকায় এবার নাড়ু এক প্রকার অনুপস্থিতই ছিল। অথচ নাড়ু ছাড়া পূজার খাবার অসম্পূর্ণই থেকে যায়।”

এ বিষয়ে অনেকটা আক্ষেপের সঙ্গে কার্তিক চন্দ্র বলেন, “নারিকেলের এবার রেকর্ড দাম। কিন্তু যতই অভাব হোক না কেন, মা দুর্গার পূজায় ফলমূল, মোয়া, নাড়ু, নারিকেল দিতে হয়। কিন্তু বাজারে নারিকেল কিনতে গিয়ে বিপাকে পরতে হয়েছে।”

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের গলাচিপাপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম। তার রয়েছে দেড়শ নারিকেল গাছ। কিন্তু গেলো ২ বছর ধরে এসব গাছ নারিকেলশূন্য। আবার এরমধ্যেই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩০টি গাছ। আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “নারিকেল গাছে ফলন বন্ধ হয়ে আমরা খুব বিপদে আছি। সংসার চালাতেই এখন কষ্ট হচ্ছে।”

আট বর্গকিলোমিটারের সেন্টমার্টিন দ্বীপে দশ হাজার বাসিন্দার অনেকের আয়ের অন্যতম উৎস নারিকেল। কিন্তু দু’বছর ধরে আশঙ্কাজনকভাবে নেই ফলন। এতে টেকনাফ থেকে ডাব নেয়ায় বাড়তি খরচে জমছে না ব্যবসা।

ডাব ব্যবসায়ীরা জানায়, ডাব যা হচ্ছে তাতে পোকা ধরে সব শেষ হয়ে গেছে। গাছের কী এক রোগ হয়ে এ দ্বীপে ডাব ধরা প্রায় বন্ধের পথে।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, দ্বীপে অপরিকল্পিত স্থাপনার কারণে নারিকেল গাছের শিকড় বিস্তৃত হতে না পারার পাশাপাশি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় গাছ মরে যাচ্ছে। ফলন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি নারিকেল গাছে এক ধরনের মড়ক লেগেছে। বিষয়টি নিয়ে যারা উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আছেন, তাদের গবেষণার প্রয়োজন আছে।

এদিকে দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, যোগান কমে যাওয়ার কারণে নারকেলের দাম বাড়ছে। খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে প্রতিমাসে প্রায় ৩ লাখ পিস নারকেল বেচাকেনা হয়।

খাতুনগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে নারকেল ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “শীতকালে এমনিতে নারকেল কম ঝুনা হয়। এতে গাছ থেকে নারকেল কম নামানো হয়। কিন্তু বাজারে কাটতি রয়েছে। যে কারণে নারকেলের দাম বাড়ে।” তিনি জানান, প্রতিমাসে খাতুনগঞ্জে কমবেশি ৫০ ট্রাক নারকেল আসে। প্রতি ট্রাকে ৫-৬ হাজার নারকেল থাকে।

প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন সুত্রের বরাতে জানান, নারিকেল অর্থকরী ফল ও তেলজাতীয় ফসল। খাদ্য বা পানীয় হিসেবে নারিকেলের যে শাঁস ব্যবহার করা হয় তা পুরো নারিকেলের ৩৫ শতাংশ মাত্র। বাকি ৬৫ শতাংশ হলো খোসা ও মালা। নারিকেলের মালা দিয়ে বোতাম, অ্যাক্টিভেটেট কাঠ কয়লা, বাটি, খেলনা, কুটির শিল্প, চামচ ও খোসা থেকে আঁশ এবং আঁশজাত দ্রব্য যেমন- দড়ি, মাদুর এসব তৈরি হয়।

দড়ি তৈরি করার সময় খোসা থেকে যে তুষ বের হয় তা পচিয়ে উৎকৃষ্ট জৈবসার তৈরি করা যায়। যশোর ও বাগেরহাট অঞ্চলে নারিকেল খোসার আঁশ ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে সাদা করে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তাছাড়া গ্লিসারিন, সাবান ও কেশ তেল তৈরিতে নারিকেল ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ভোজ্যতেল হিসেবেও নারিকেল তেল উৎকৃষ্ট।

নারিকেলের চোবড়ার ঝুরা দিয়ে উৎকৃষ্ট মানের বীজ চারা উৎপাদন মিডিয়া হিসেবে নার্সারির বেডে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে প্রায় ৩৫ কোটি নারিকেল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দেশে প্রায় ১০ কোটি নারিকেল উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ মাত্র ৩ ভাগের ১ ভাগ চাহিদা মিটানো যায়। শ্রীলঙ্কায় যেখানে বছরে মাথাপিছু নারিকেলের ব্যবহার ১৪০টি সেখানে বাংলাদেশে ব্যবহার হয় ১টি নারিকেল।

পরিসংখ্যানের আলোকে তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন নারিকেল উৎপাদন হয়। মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নারিকেল ডাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়, ৪৫ শতাংশ ঝুনা নারিকেল হিসেবে খাওয়া হয়, ৯ শতাংশ দিয়ে তেল তৈরি হয় এবং অবশিষ্ট ৬ শতাংশ হতে চারা করা হয়। সারা বিশ্বে নারিকেল উৎপাদন হয় তেল তৈরির জন্য আর বাংলাদেশে নারিকেল চাষ হয় ফল ও পানীয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য।

পানীয় বা শাঁস যেভাবেই ব্যবহার করা হোক না কেন তাতে নারকেলের মাত্র ৩৫ শতাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে। বাকি ৬৫ শতাংশ মালা, ছোবড়া ও পানি সমন্বয়ে গঠিত যা অব্যবহৃতই থেকে যায়। প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এর খোসা, মালা ও পানি থেকে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি উপার্জন করা সম্ভব। নারিকেল থেকে তুলনামূলকভাবে কম উপার্জন হলেও তা সারা বছরব্যাপী হয়।

নারিকেলের শাঁস ও ডাবের পানিতে বিভিন্ন প্রকার খনিজ পদার্থ ও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ই ও ফ্যাটি এসিড আছে যা শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে ও রোগ জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই জাতীয় জীবনে পুষ্টি চাহিদা পূরণে নারিকেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানেও নারিকেল ব্যবহার করা হয়।

উপকূলীয় অঞ্চলে বাগান প্রতিষ্ঠা করে দেশে নারিকেল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে জানান তিনি। এলাকভিত্তিক জাত নির্বাচন করে রোপণের জন্য যথাযথ মানের বীজ সংগ্রহ করে নারিকেল গাছের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে গাছগুলো রয়েছে তার সঠিক পরিচর্যা করতে উদ্যোগি হতে হবে।

নদী বন্দর/এসএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com