বর্ষা মৌসুমের আগেই সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি গ্রামের প্রায় ৫০টি ঘর-বাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষার সময় কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন নদী পাড় ও চরাঞ্চলের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিক সময়ে স্পার বাঁধ এলাকা থেকে দক্ষিণ পাঁচিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজ শুরু না করায় খুকনী ও জালালপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০ গ্রামে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
এদিকে, সহায় সম্বলহীন হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই এখন ঘর বাড়ি ভেঙে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।
আরকান্দি গ্রামের ভাঙন কবলিত নুরুল ইসলাম, গ্যাদন, নুরুজ্জামান ও আবু বক্কার বলেন, প্রায় ১০ থেকে ১২ দিন আগে তাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে তারা এখন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
ব্রাহ্মণ গ্রামের সুফিয়া খাতুন, মনিরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, হাসমত, সিদ্দিক, রউফ, মনতাজ আলী ও মোহাম্মদ আলীসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে এ অঞ্চলে যমুনার অব্যাহত ভাঙনে ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রামের অনেক জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। বছরের পর বছর ধরে ভাঙনে নদী তীরবর্তী মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
এদের অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। এতে মানবেতর জীবন যাপন করছে বহু পরিবার। এছাড়া, হুমকির মুখে পড়েছে বহু স্থাপনাসহ ঘর-বাড়ি। অনেক আন্দোলনের পর গত বছর এ অঞ্চলে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাড়ে ৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করে।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পাউবোর গাফিলতি এবং উদাসীনতায় ভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে না এ জনপদের মানুষ। সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার কাজ চলছে, অথচ কোনো বস্তা ডাম্পিং কিংবা প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি স্থানীয়দের।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, দুই পাশে জিও ব্যাগ দিয়ে কাজ চলমান রয়েছে এবং জিও টিউব সংযোজন করা হয়েছে। ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ভাঙন রোধের সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি চৌহালীতে আমাদের একটা প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। সেই প্রকল্পের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। ভাঙন রোধের জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
নদী বন্দর/এসএস