1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
যমুনায় বিলীন বসতবাড়ি এই ঈদেও পাতে উঠবে না মাংস - Nadibandar.com
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০২৩
  • ৭৭ বার পঠিত

‘রোজার মাসে ভর্তা-ছানা খেয়ে রোজা রেখেছিলাম। ট্যাহা-পয়সা নাই বলে তখন ঈদের দিনও গরুর মাংস জোটে নাই। ভাবছিলাম এবার ঈদে পেটভরে মাংস খামু। কিন্তু এ ঈদেও পাতে উঠবে না গরুর মাংস। বাড়িঘর সব নদীতে। এখন ঝড়-বৃষ্টি হইলে থাকমু কনে সেই চিন্তায় থাকি? আংগোরে (আমাদের) কেউ কি আছে দেখার, যে কি খাই না খাই খোঁজ নেবে।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের জীবনের কষ্টের কথা বলছিলেন আছিয়া খাতুন (৬৫)। যমুনা নদীগর্ভে তার বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। শুধু আছিয়া খাতুনই নন, তার মতো এমন আরও অনেক অসহায় মানুষ রয়েছেন যাদের ঈদ বলতে কিছু নেই। যমুনা নদীর ভাঙন তাদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। তাই ঈদের বদলে এখন তারা মাথা গোঁজার ঠাই নিয়ে চিন্তায় থাকেন।

গত তিন সপ্তাহে সিরাজগঞ্জে শতাধিক ভিটেবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি, খুকনি ও জালালপুর ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে বেশি ভাঙন। স্থানীয়দের দাবি, ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগ কাজে আসছে না। ফলে চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন যমুনার তীরবর্তী বাসিন্দারা।

শনিবার (২৪ জুন) শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাচিল গ্রামে গেলে দেখা যায়, যমুনার ভাঙন আতঙ্কে নদীর তীরবর্তী বসতবাড়ির অনেকে আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ যমুনার গর্ভে সব কিছু হারিয়ে অন্যের জমিতে ছাপড়া ঘর বানিয়ে কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন।

হাটপাচিল গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস ও মতিন মিয়া বলেন, আমরা সাতজন করে মিলে প্রতিবার কোরবানি দিতাম। এভাবে ৫০ ঘর মিলে চার-পাঁচটা গরু হতো। ফলে সমাজের ভাগে প্রত্যেক পরিবার ৩-৪ কেজি করে মাংস পেতো। কিন্তু এবার আর সেটা হবে না। নদীভাঙনের কারণে কোরবানির ঈদেও আমাদের পাতে উঠবে না কোনো মাংস।

হাটপাচিল গ্রামের বিধবা আজিদা ও আলেয়া বেগম বলেন, ‘মেলাবার বাড়ি ভাঙে গেছে, হেন থেন অনে মেলাবার আমার এই ছাপড়া ঘর হরায়ছি। এইবারও ভেঙে গেছে। এহন যামু কোনে থাকোনোর জায়গা নাই। মেঘ আইলে ভিজে যাই, রৈদে ঘাঘতর পুড়ে যায়। আমাগোরে দেখবার কেউ নাই।’

এই ঈদেও পাতে উঠবে না মাংস

কৈজুরি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও হাটপাচিল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ সরকার জানান, তাদের বংশের ১৩টি ঘরসহ গ্রামের প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তারা অন্যত্র থাকার জন্য জমি খুঁজছেন।

খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, গত তিন সপ্তাহে ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার যমুনায় ভেঙে গেছে। এতে বিলীন হয়েছে প্রায় ৯০টি বসতবাড়ি। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে ঘরবাড়ি নদীতে চলে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে কোনোমতে রাত পার করছি। এবার আমাদের কোনো ঈদ নেই।

জালালপুর ইউনিয়নের পাকরতলা গ্রামের বাসিন্দা জসমত সেখ জানান, কয়েকদিনে এ গ্রামের ১০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন তারা অন্যের জায়গায় বসবাস করছেন।

এই ঈদেও পাতে উঠবে না মাংস

কৈজুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারের উদাসীনতায় এ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে হাটপাচিল গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ি ও খুকনি এবং জালালপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কেউ কেউ ভাঙনের আগেই ঘর ও আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিলেও জায়গা না থাকায় ঘর উঠাতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহযোগিতার জন্য তৈরি করা হচ্ছে তালিকা।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছিল। তবে ভাঙনরোধে এলাকায় জিও ব্যাগও ফেলা হচ্ছে।

নদী বন্দর/এসএস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com