নতুন শিক্ষাক্রম সংশোধন করে পরীক্ষা পদ্ধতি বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে যারা মানববন্ধন করছেন, তারা প্রকৃত অভিভাবক নয় বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা এ তথ্য দিয়েছেন।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ‘নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ বৈঠক হয়। এতে ঢাকা অঞ্চলের ১১ জেলার ৪৫৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অংশ নেন। পর্যায়ে সব অঞ্চলের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মন্ত্রী।
প্রথম দফায় ঢাকা অঞ্চলের শিক্ষকদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে উপস্থিত অন্তত পাঁচজন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক। তারা জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার রুখতে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন।
যেসব অভিভাবক ও শিক্ষার্থী আন্দোলনে নেমেছে, তাদের ডেকে শিক্ষাক্রম সম্পর্কে ধারণা দিতে বলেছেন। পাশাপাশি তিনি স্কুলে স্কুলে দ্রুত অভিভাবক সমাবেশ করে শিক্ষাক্রম বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন।
মন্ত্রী আরও জানান, শিগগির স্কুলগুলোতে সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহে নভেম্বরে একটি অ্যাপ চালু করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তিও নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে হবে । এটাও অভিভাবকদের জানাতে বলেছেন দীপু মনি।
বৈঠকে ঢাকার যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে মানববন্ধন হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। তারা শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, মানববন্ধন বা সমাবেশে যারা আসছেন, তাদের অনেকে কোচিং ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত। বয়সে তরুণ প্রাইভেট-কোচিং চালানো অনেক শিক্ষার্থীকেও মানববন্ধনে দেখা গেছে। তাদের উসকানিতে কিছু অভিভাবক না বুঝে আন্দোলনে আসছেন। যারা আসছেন অধিকাংশই প্রকৃত অভিভাবক নন।
পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকরা নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে শিক্ষকদের আরও বেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। সুপারভাইজারদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কমিয়ে সরাসরি পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণে জোর দেওয়ারও আহ্বান জানান শিক্ষকরা।
মিরপুর মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক শুভাশীষ কুমার বিশ্বাস এ বৈঠকে অংশ নেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম যুগান্তকারী একটি শিক্ষাক্রম। এটি নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে। এ অপপ্রচার রুখতে শিক্ষকদের কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।’
ভার্চুয়াল এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।
জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘২৩ অক্টোবর রাতে একটা সভা হয়েছে। আগামীতে আরও অনেকগুলো এমন বৈঠক করা হবে। শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার রুখতে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকরাও তাদের মতামত জানিয়েছেন। আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো আমরা বিবেচনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেবো।’
এদিকে, শিক্ষাক্রম সংশোধন ও পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রাখাসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে স্কুলে স্কুলে মানববন্ধন করছেন অভিভাবকরা। শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের ব্যানারে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্কুলের সামনে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ২৬ অক্টোবর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল (বালক ও বালিকা), ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, ৩১ অক্টোবর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখায়, ১ নভেম্বর সেন্ট জোসেফ, মোহাম্মদপুর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল, ২ নভেম্বর মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন করা হবে।
জানতে চাইলে আন্দোলনরত অভিভাবক ফোরামের সদস্য মারজান আক্তার বলেন, ‘যারা কর্মসূচিতে আসছেন, তারা প্রত্যেকে অভিভাবক। তাদের সন্তানরা কোথায় পড়েন, কোন ক্লাসে পড়েন সেটাও জানাচ্ছেন। ভুয়া অভিভাবক বলে এখানে কেউ নেই। গাইড বা কোচিংয়ে যুক্ত কেউ এখানে উসকানি দিচ্ছেন না। আমরা চাই, এ কারিকুলামটা সংশোধন করে পরীক্ষা বহাল করা হোক। শিক্ষার্থীদের খরচ কমানো হোক।’
নদী বন্দর/এসএইচবি