আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে টানা চতুর্থবার নির্বাচিত হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ গঠন, সংসদ নেতা, সংসদ উপনেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ, হুইপ নির্বাচন করা হয়েছে।
এখন সংসদের কারা স্থায়ী কমিটির সদস্য হবেন, কারা বিরোধীদল হচ্ছে, কারা হবেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য-তা নিয়ে চলছে আলোচনা। আগামী ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিকে দৃষ্টি সবার।
সংসদ সূত্র জানায়, আগামী ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে রীতি অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন। সেই ভাষণের ওপর মাসব্যাপী সংসদ সদস্যরা আলোচনা করবেন।
ইতোমধ্যে সংসদ নেতা হিসেবে শেখ হাসনিা ও সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হয়েছেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। একাদশ সংসদের চিফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী এবারও স্বপদে বহাল আছেন। তবে পরিবর্তন হয়েছে সরকারি দলের হুইপ পদে। কারণ একাদশ সংসদের তিনজন হুইপ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। তারা হলেন মাহবুব আরা গীনি, শামসুল হক ও আতিউর রহমান আতিক। নবনিযুক্ত হুই হলেন-ইকবালুর রহিম এমপি (দিনাজপুর-৩), আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি (জয়পুরহাট-২), মো. নজরুল ইসলাম বাবু এমপি (নারায়ণগঞ্জ-২), সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি (কক্সবাজার-৩) এবং মাশরাফী বিন মতুর্জা এমপি (নড়াইল-২)।
এদিকে এখনও ঠিক হয়নি সংসদে বিরোধীদলের ইস্যু। যদিও জাতীয় পার্টি ইতোমধ্যে প্রধান বিরোধীদল হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। সেই অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করেছে জাতীয় পার্টি। এছাড়া দলটির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে উপনেতা, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে সংসদীয় দলের চিফ হুইপ ও সংসদ সদস্য হাফিজউদ্দিন আহম্মেদকে জাতীয় পার্টির হুইপ মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলটি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতাসহ সংশ্লিষ্ট পদগুলোর স্বীকৃতি পেতে স্পিকারকে চিঠি দেবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা ঠিক করবেন স্পিকার। আমাদের সংসদীয় দলের সভার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে স্পিকারকে জানাবো।
এছাড়া নির্বাচিত ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের জোটবদ্ধভাবে বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকার কথা শোনা গেলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী এই স্বতন্ত্র এমপিদের বেশিরভাগই বিরোধীদলের ভূমিকা পালনে অনাগ্রহী। তারা যেকোনো ফরম্যাটে সরকারের কাছাকাছি থাকতে চান।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আছেন ৬২ জন। এর মধ্যে ৫৮ জন আওয়ামী লীগের নেতা। তবে প্রধানমন্ত্রী সব স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, বিশেষ করে দলীয় নেতা যারা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের ভূমিকা কী হবে, তাদের পাওয়া আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত নারী আসন কীভাবে বা কাদের বণ্টন করা হবে-এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন।
নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। গত ৯ জানুয়ারি গেজেট হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের। এই হিসাবে আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ভোট করতে হবে। ভোটার তালিকা প্রস্তুতসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির পরে তফসিল ঘোষণা করার কথা।
আইন অনুযায়ী, সরাসরি ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে নারী আসন বণ্টন করা হয়। সংসদের সাধারণ আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনের ভোটার। এবার সংসদে সংরক্ষিত আসনে অধিকাংশই নতুন মুখ আসছে। এর মধ্যে ত্যাগী নেতাদের পরিবারের সদস্য, সংস্কৃতি, বিনোদন অঙ্গনের প্রতিনিধিদের দেখা যেতে পারে।
সংসদের প্রথম অধিবেশনেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি সংসদে আলাদা রুম, পিএস, গাড়ি, ভাতা ও নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। মন্ত্রী বঞ্চিতদের চোখ এখন সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদে।
জাতীয় সংসদে চিফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী বলেন, ত্যাগী, পরিশ্রমী কর্মীরা স্থায়ী কমিটি ও সংরক্ষিত আসনের এমপি হবেন। শুধু অলঙ্কার হিসেবে নয় যোগ্যদেরই সংরক্ষিত আসনের এমপি ও স্থায়ী কমিটিতে রাখা হবে।
নদী বন্দর/এসএইচবি