নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজে বিলম্ব হওয়ায় চরম শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে হাওরাঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর একমাত্র বোরো ফসল রক্ষার জন্য হাওরাঞ্চলে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। কিন্তু এবার নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
জেলার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও কলমাকান্দা হাওর অধ্যুষিত এলাকায় পিআইসির মাধ্যমে প্রতিবছর বেরিবাঁধের কাজ হয়। তবে দলীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিগত আট বছর ধরে এই কাজ পরিচালিত হওয়ায় সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া এবং কাজের মান নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় কৃষক এবং পরিবেশবিদদের মতে, পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সরকারের অর্থ সাশ্রয় হতো, নদী, খাল, বিল, জলাশয় ভরাট হতো না এবং অল্প পানিতে হাওর ডুবে যাওয়া রোধ করা যেতো।
খালিয়াজুরীর জগন্নাথপুরের কৃষক সবুজ মিয়া জানান, চৈত্র মাসে পানির অভাবে জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয় না, আর বৈশাখ আসার আগেই জোয়ারের পানিতে ফসল তলিয়ে যায়। নদীর পানির ধারণক্ষমতা না বাড়িয়ে প্রতিবছর মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়, যা সমস্যা সমাধানে কার্যকর নয়। এবার বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় শঙ্কা আরও বেড়েছে।
পরিবেশবিদ মো. অহিদুর রহমান বলেন, নদী, খাল, বিল খননের পরিবর্তে বারবার মাটি দিয়ে এগুলো ভরাট করা হচ্ছে, যা হাওরের বৈশিষ্ট্য নষ্ট করেছে। এ কারণে ধানের ফলনও কমে গেছে। স্বল্পজীবনকালীন ধান চাষ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে ধান রক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলে কৃষকদের মধ্যে আর কোনো ভয় থাকবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, হাওরাঞ্চলের ৩৬৫ কিলোমিটার বেরিবাঁধের মধ্যে ১৪৬ কিলোমিটারে কাজ চলছে। ১৯১টি পিআইসির মাধ্যমে ৩১ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের শুরুতে কাজ করার কথা থাকলেও এবার কাজ শুরু হয় অনেক দেরিতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারওয়ার জাহান জানান, এখন পর্যন্ত কাজের ৭৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এবছর কাজের গতি ভালো এবং কোনো গাফিলতি নেই। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।
নদী বন্দর/এসএইচ