আজ ৭ ফেব্রুয়ারি, রোববার চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম দিন সকালে সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর আগে হঠাৎ এক মিনিট নীরবতা পালন করলো বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। শুধু এক মিনিট নীরবতা পালনই নয়, ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের বাহুতে কালো ব্যাজ।
খুব স্বাভাবিকভাবে উঠলো প্রশ্ন, কার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খেলা শুরুর আগে এই নীরবতা পালন? কেনই বা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারদের বাহুতে শোকের চিহ্ন?
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ইলেক্ট্রনিক বোর্ডে ভেসে উঠলো সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার এজরা মোজলে আর নেই। ১৯৫৮ সালে জন্ম নেয়া সাবেক এ ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
সেই সাত সমুদ্র তেরো নদী ওপারে বিদেশ বিভুঁইয়ে খেলতে এসেও ক্যারিবীয়রা তাদের সাবেক জাতীয় ক্রিকেটাররকে গভীর শ্রদ্ধা ও সন্মান দেখাতে ভুল করেনি। একেই বলে সাবেক ক্রিকেটারের প্রতি আন্তরিক সন্মান প্রদর্শন।
এমন নয় যে – এজরা মোজলে ছিলেন অনেক নামী ও বড় তারকা। তাকে কিছুতেই ক্লাইভ লয়েড, রোহান কানাই, আলভিন কালিচরন, ভিভ রিচার্ডস, গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, কার্টলি অ্যামব্রোস, ওয়ালশ, রিচি রিচার্ডসন, কার্ল হুপার, ব্রায়ান লারার মত সুপার স্টার, কালজয়ী কিংবা কিংবদন্তিতূল্য ক্রিকেটারের তালিকায় ফেলা যায় না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ও নামী ক্রিকেটারের তালিকায় তার নাম নেই। তারপরও সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২টি টেস্ট আর ৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। সেই ১৯৯০-১৯৯১’তে অতি স্বল্প সময়ের ছোট্ট ক্যারিয়ার এজরা মোজলের।
কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দেশের হয়ে বল ও ব্যাট হাতে মাঠে লড়াই করা ক্রিকেটার মানেই জাতীয় বীর। দেশের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।’ তাকে যথাযথ সন্মান প্রদর্শনটাই আসল কাজ।
তাই জাতীয় দল দেশের বাইরে থাকাকালীন সময়েও মোজলেকে শ্রদ্ধা দেখানো ও সন্মান প্রদর্শন; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ক্যারিবীয়রা পারলেও পারেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও জাতীয় দল।
এইতো ক’দিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের দিন সকালে পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের অভিভাবক রাইসউদ্দীন আহমেদ। তার আত্মার প্রতি এতটুকু সন্মান প্রদর্শন করতে পারেনি বিসিবি ও টিম বাংলাদেশ। এক মিনিট নীরবতা পালন আর কালো ব্যাজ পরে মাঠে নামা – কিছুই হয়নি।
কেউ কেউ হয়ত না জেনে বলতে পারেন রাইস উদ্দীন আহমেদ হয়তো ব্যাট ও বল হাতে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামেননি। তাতে কি? রাইস উদ্দীন আহমেদরা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাজিয়ে দিয়েছেন।
এখন দেশের ক্রিকেট সাজানো বাগান, যাতে থরে থরে রঙ্গ বেরঙ্গের ফুল ফুটেছে। সে ফুলের সৌরভে চারদিক শুরভিত হচ্ছে। রাইস উদ্দীন আহমেরা সেই বাগান নির্মাণ করেছিলেন। তারাই ফুলের বাগান চাষ করেছিলেন। আর তার সেই ফুলের বাগানই আজকের বাংলাদেশের ক্রিকেট; কিন্তু সেই মানুষটি তার কৃতকর্মের ন্যুনতম সন্মাননা পাননি। কোন শ্রদ্ধাও মেলেনি।
কেন, কি কারণে দেশের ক্রিকেটের অন্যতম রূপকার রাইসউদ্দীন মৃত্যুর পর তার প্রাপ্য সন্মান পেলেন না? সে ব্যাখ্যা ও সদুত্তরর নেই। কেন এই কুণ্ঠা? আসলে দেশের ক্রিকেটের অন্যতম স্থপতি রাইসউদ্দীনকে যথাযথ সন্মান প্রদর্শনে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কারা? এ লজ্জা কার? অথচ, ক্যারিবীয়দের সঙ্গে কিন্তু দাঁড়িয়ে তাদের ক্রিকেটারকে সম্মান জানিয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার এবং কর্মকর্তারাও।
আজ রোববার সকালে মোজলের আত্মার প্রতি ক্যারিবীয়দের দেখানো সন্মান ও শ্রদ্ধা আরেকবার মনে করিয়ে দিল, পূর্বসুরীদের যথাযথ সন্মান ও শ্রদ্ধা দেখানোয় অনেক পিছিয়ে বিসিবি এবং জাতীয় দল।
নদী বন্দর / জিকে