৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছানো সম্ভব কি না— সিদ্ধান্ত নিতে তিন দিনের সময় চেয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। পিএসসিকে এ সময় দিয়ে আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছেন, আগামী শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেল ৫টার মধ্যে পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত জানানো না হলে তারা পিএসসি চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামবেন।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিএসসি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব কথা জানান পরীক্ষার্থীরা।
বৈঠকে অংশ নেওয়া সিয়াম নামে এক বিসিএস পরীক্ষার্থী প্রথমে জানান পিএসসি পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। অর্থাৎ পূর্বঘোষিত ৮ মে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এমন তথ্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাইরে অবস্থানরত বিভিন্ন বিসিএসের পরীক্ষার্থীরা।
পরে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া সেনা কর্মকর্তা মেজর রেদোয়ান আন্দোলনরত বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জানান, পিএসসি সিদ্ধান্ত বদলাতে তিন দিনের সময় চায়। যেহেতু বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। সেজন্য অনেক বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। সিদ্ধান্ত বদলাতে হলে অর্থাৎ পরীক্ষার সময় পেছাতে হলে অনেক কিছুই আবার নতুন করে রিঅ্যারেঞ্জ ও ম্যানেজ করতে হবে। এজন্যই মূলত পিএসসি তিন দিনের সময় চায় এবং পিএসসি একটি কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এই এলাকাটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
তখন পরীক্ষার্থীরা সেই তিন দিনের সময় মেনে নিয়ে পিএসসি ভবনের বাইরে এসে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সিয়াম বলেন, পিএসসি তিন দিনের সময় চেয়েছে। আমরা সেটা মেনে নিচ্ছি তবে, তিন দিন মানে তিন দিন। অর্থাৎ আগামী শুক্রবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে যদি ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার তারিখ পেছানোর সিদ্ধান্ত জানানো না হয় তাহলে আমরা আর এই দাবিতে আন্দোলন করতে আসব না, সরাসরি একদফার আন্দোলন অর্থাৎ পিএসসির চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামব।
তিনি ঘোষণা করেন, আগামী শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলনরত বিভিন্ন বিসিএসের পরীক্ষার্থীরা আবারও পিএসসি কার্যালয়ে আসবেন।
এর আগে দুপুরে ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে পিএসসি কার্যালয়ে ঢুকে অবস্থান নেন বিভিন্ন বিসিএসের পরীক্ষার্থীরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে স্থানীয় থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল টিম। বিকেল ৩টার দিকে বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ৬ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসেন পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোবাশ্বের মোনেম।
ভেতরে বৈঠক চলা অবস্থায় বাইরে থাকা পরীক্ষার্থীরা বলেন, পিএসসি ঘোষণা করেছে আগামী ৮ মে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু এ তারিখ থেকে লিখিত পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক নন পরীক্ষার্থীরা। কারণ, সরকারি কর্ম কমিশন থেকে জানানো হয়েছিল— পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পিএসসির ফেসবুক পেজে জানানো হবে। ফেসবুক পেজে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ জানানো হয়েছিল মে মাসের শেষ সপ্তাহে। সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে ঈদের আগে আমাদের নোটিশ দিয়ে জানানো হয় লিখিত পরীক্ষা শুরু হবে ৮ মে। এটি আমাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রহসন।
তারা বলেন, ইতোমধ্যে ৪০তম বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষা চলছে। এছাড়া ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে অন্তত দেড় বছর আগে। সেটার ফলাফল এখনও হয়নি। এর মধ্যে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার আয়োজনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। এ পরীক্ষার একমাস পর আবার ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।
এক পরীক্ষার্থী বলেন, এক মাসের নোটিশে ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দেওয়া কতখানি যুক্তিযুক্ত? যেখানে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার দুই মাস আগে নোটিশ করা হয়েছে সেখানে ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এক মাস আগে জানানো হলো।
পরীক্ষার্থীরা আরও বলেন, ৮ মে থেকে আমরা পরীক্ষাায় অংশ নিতে চাই না। ওই পরীক্ষা পিছিয়ে জুন মাসে নিতে হবে। পাশাপাশি আগামী জুন মাসের আগেই ৪০তম বিসিএসের রেজাল্ট ক্লিয়ার করতে হবে। যেন একই প্রার্থী বারবার অন্য বিসিএসগুলোতে অংশ নিতে না পারে। কারণ, একজন প্রার্থী বিভিন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাডারে সুযোগ পাচ্ছে, অন্য পরীক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এটা পরীক্ষার্থীদের সমস্যা নয় পিএসসির সমস্যা। এসব দাবিতে আমরা আজকে পিএসসিতে এসেছি। পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন আমাদের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকে আশা করি সঠিক সিদ্ধান্ত জানাবে পিএসসি।
বিক্ষুব্ধ এক পরীক্ষার্থী বলেন, এর আগেও আমরা পিএসসি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছি। আজ সকালে তিনি সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এটার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পিএসসি চেয়ারম্যান বলেছেন— নিচে যারা অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন তারা বিসিএসের পরীক্ষার্থী নয় বা তারা দুর্বল পরীক্ষার্থী ও অযোগ্য। পিএসসির মতো জায়গায় সর্বোচ্চ পজিশনে থেকে এ ধরনের কথা কোনোভাবেই মানা যায় না। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস নাকি এক। বিষয়টা হাস্যকর। এই কথা তিনি কীভাবে পিএসসি চেয়ারম্যান হয়ে বলতে পারেন। যদি তাই হয় তাহলে লিখিত নেওয়ার দরকার কী, প্রিলিমিনারি দিয়েই তো চাকরি দিয়ে দিতে পারেন। তার এ ধরনের বক্তব্য আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং তাকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষার্থী মো. আবিদুল ইসলাম বলেন, ২২ এপ্রিল ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা। আবার ৮ মে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। জুনে আবার ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। সেক্ষেত্রে আমি মাত্র দুই সপ্তাহের কম সময় পাচ্ছি। যা রীতিমতো জুলুম ও অন্যায়। অনেক পরীক্ষার্থী আছেন যাদের একই দিনে ভাইবা ও লিখিত পরীক্ষার তারিখ পড়েছে। পিএসসির এমন সিদ্ধান্ত মেধাবীদের সঙ্গে বঞ্চনার শামিল।
নদীবন্দর/এএস