সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় ১৫ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরার ওপর ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা। যা চলবে আগামী ১১ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ভোলার প্রায় ৬৫ হাজার নিবন্ধিত সাগরের জেলে।
সাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে ইতোমধ্যে ফিশিংবোট জালসহ মাছ ধরার সব সরঞ্জামাদি নিয়ে তীরে ফিরে এসেছেন ভোলার জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার শুরুতে সরকারি খাদ্য সহায়তার চালসহ ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন কর্মহীন জেলেরা। তবে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করায় খুশি ভোলার জেলেরা।
সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার খাল দৌলতখান উপজেলার পাতারখাল রাধাবল্লভসহ বেশ কয়েকটি নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সাগরে মাছ ধরার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেরা ফিশিংবোট নিয়ে তীরে ফিরে এসেছেন। কেউ কেউ ফিশিং বোট থেকে জালসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ বোট মেরামত শুরু করেছেন।
কথা হয় দৌলতখান উপজেলার পাতারখাল এলাকার সাগরগামী জেলে রশিদ ও নুরনবীর সঙ্গে। তারা বলেন, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর সরকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা মেনে ২ দিন আগেই আমরা তীরে ফিরে এসেছি। এখন বোট থেকে জাল নামিয়ে নিচ্ছি নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে ফের সাগরে যাব।
একই এলাকার হারুন মাঝি ও বাবুল মাঝি বলেন, সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। ফলে আমরা পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছি। আয় বন্ধ রয়েছে। বিগত দিনের ধারদেনা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। আড়ৎদার ও মহাজন দেনার পরিশোধের জন্য চাপ না দিলেও এনজিওর কিস্তি না দিয়ে পারব না। সরকারের কাছে দাবি জানাই যেন ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখে। কারণ আমাদের আয় বন্ধ।
ভোলার খাল এলাকার আলী আহম্মদ মাঝি ও জেলে আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত চাল অভিযানের শুরুতে যেন দেওয়া হয়। চালের সঙ্গে আর্থিক অনুদানের দাবি জানাই কারণ এখন আমরা বেকার। অন্য কোনো কাজ আমরা জানি না। অভিযানের শুরুতে চাল না পেলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হবে। তাছাড়া সরকারের কাছে দাবি জানাই চাল যেন সঠিকভাবে বিতরণ করা হয়। অনেক প্রকৃত জেলে সরকারি চাল থেকে বঞ্চিত হয়।
তারা আরও বলেন, এ বছর ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সাগরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়াতে ভালো হয়েছে। কেউ মাছ ধরতে পারবে না। বিগত বছরগুলোতে নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা সাগরে না গেলেও ভারতের জেলেরা এসে মাছ ধরত।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। সচেতনতা সভা করেছি যাতে কেউ সাগরে না যায়,একই সাথে বরফ কলগুলোকে বলেছি সাগরগামী কোনো ফিশিংবোটকে বরফ না দিতে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসাব,এবং ঘাটগুলো নজরদারিতে রাখব। ভোলার জেলেদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভারতের সাথে মিল রেখে সাগরে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণ করা, সরকার এ বছর তাই করেছে।
তিনি আরও বলেন, জেলা টাস্কফোর্সের মিটিং হয়েছে। নিষেধাজ্ঞাকালীন জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড নৌপুলিশ আমাদের সহযোগিতা করবে। জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি খাদ্য সহায়তার চালের অর্ডার এখনও পাইনি। শিগগিরই পাব। পেলে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ভোলা জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে জেলায় মোট নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮৩ জন। এর মধ্যে সাগরগামী জেলের সংখ্যা ৬৫ হাজার।
নদীবন্দর/জেএস