1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
নওগাঁয় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ অবশেষে সংস্কার শুরু - Nadibandar.com
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১ পূর্বাহ্ন
নদীবন্দর,নওগাঁ
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত

নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলাবাসীর গলার কাঁটা মালঞ্চি-নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ। গোনা ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় আশির দশকে নির্মিত বেড়িবাঁধটি বছরের পর বছর স্থায়ীভাবে সংস্কার কিংবা মেরামত না করার কারণে বাঁধটির প্রায় ৬ কিলোমিটার অংশই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল।

গত ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো বাঁধের অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ কিছু অংশ মেরামত করা হলেও বর্তমানে পুরো অংশটি খুবই নাজুক। অবশেষে সেই নাজুক অংশ মেরামতের কাজ শুরু করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আগে বর্ষা মৌসুমে ছোট যমুনা নদীতে যখনই পানি বেড়ে ঝূঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হতো, তখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা ছোটাছুটি শুরু করতো। আর যখন নদীতে পানি থাকে না তখন বাঁধটি মেরামত কিংবা সংস্কার করার কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করা হতো না। একাধিকবার ঝূঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং হাজার হাজার হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। এমন অবস্থা থেকে মুক্ত হতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ উদ্যোগে বর্ষার আগেই সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের এমন জনবান্ধব কর্মকাণ্ডে স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। অন্তত এবার নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেও বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যা হওয়ার শঙ্কা নিয়ে রাত কাটাতে হবে না বলে জানিয়েছেন বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত বাসিন্দারা।

রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. নজরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় ওই বেড়িবাঁধের কৃষ্ণপুর আলাউদ্দিনের জমি থেকে বেলালের জমি পর্যন্ত সাড়ে ৪০০ ফিট আর বেলালের জমি থেকে রফিকুলের জমি অভিমুখে ৪২৬ ফিট মোট ৮২৬ ফিট বাঁধের বিপরীত অংশে মাটি দিয়ে প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে এই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। আগে ওই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপরের বিভিন্ন অংশের প্রস্থ ছিল গড়ে ৬ থেকে ১০ ফিটের মধ্যে; যা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে যাওয়ার ভয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে সংস্কারের মাধ্যমে মাটি দিয়ে বাঁধের ওপরের অংশের প্রস্থ ২৪ ফিট আর নিচের অংশের প্রস্থ করা হচ্ছে ৫০ ফিট; যা নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হলেও ভেঙে যাওয়ার কোনো ভয় থাকবে না। সার্বক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে সংস্কার কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন। বেড়িবাঁধের এমন সম্প্রসারণ কাজের কারণে দুই উপজেলার মানুষরা বাঁধ ভেঙে হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া বন্যার কবল থেকে রেহাই পাবেন বলে আশা করছি।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, ইতোমধ্যেই কৃষ্ণপুর স্থানে ছোট যমুনা নদীর বাম তীরে ভাঙন কবলিত স্থানে ২৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে জিও বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে অস্থায়ী তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্মিলিতভাবে বেড়িবাঁধের প্রশস্তকরণ কাজ চলমান রেখেছে। আশা করি এমন কাজে দুই উপজেলার লাখ লাখ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী সুফল পাবেন।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে ছোট যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিত। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের যে কোনো স্থানে ভেঙে গিয়ে রাণীনগর ও আত্রাই এই দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামসহ হাজার হাজার হেক্টর ফসলের জমি তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকত। বিভিন্ন সময় ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে অস্থায়ীভাবে বাঁধের মেরামত করা হলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। ফলে নদীতে পানি বাড়লেই প্রতিবছরই বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ অংশ মেরামতের প্রয়োজন হতো। এমন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সম্প্রতি ঝূঁকিপূর্ণ বাঁধটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বর্ষা মৌসুমের আগেই বেড়িবাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ অংশ স্থায়ীভাবে মেরামত ও সংস্কার করার নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক চলতি মাসের শুরু থেকে বেড়িবাঁধের নদীর বিপরীত পাশে মাটি দিয়ে প্রশস্তকরণ কাজ শুরু করা হয়েছে।

এই কাজের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের নদীর ভিতরের অংশে জিও বস্তা ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের মাধ্যমে সংস্কার করছে; যাতে নদীতে পানি বাড়লেও বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ কোনো অংশ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা থাকবে না।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল জানান, যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে স্বচ্ছ ও দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা থাকা জরুরি। যমুনা নদীর মালঞ্চি-নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি শুধু দুই উপজেলার নয়; পুরো জেলার জন্যও গলার কাঁটা ছিল। সেই বাঁধে বার বার অর্থ খরচ না করে এবার জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আগেই স্থায়ীভাবে মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চলমান সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে এবার আর বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের মানুষদের নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না। ধারাবাহিকভাবে এই বাঁধসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা নিয়ে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হবে।

নদীবন্দর/জেএস

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com