পরিস্থিতি ঘোলাটে না করে অচিরেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার (১৭ মে) জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ৮ম-প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। গুলশানের লেকশোরে অনুষ্ঠিত এনডিএমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাত স্বাগত বক্তব্য দেন।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা করা না গেলে ‘পতিত পলাতক স্বৈরাচার’কে মোকাবিলা করা সহজ হবে না।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, লোভ-লাভের প্রলোভন থেকে মুক্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকার শীঘ্রই জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করবে।
বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছে। তবে সরকার সেই আহ্বানে তেমন সাড়া দেয়নি। বরং জাতীয় নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণাকে ‘অল্প সংস্কার, বেশি সংস্কার’—এই ধরনের একটি কৌশলী শর্তের বেড়াজালে আটকে রেখেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বাড়ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে সমবেত হচ্ছেন। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে ও বাইরে অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।
তারেক রহমান মনে করেন, সরকার যদি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে এবং এই পরিস্থিতি সরকারের জন্য সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। গণতান্ত্রিক বিশ্বে নানা সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের সঙ্গে থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকে—এটাই গণতান্ত্রিক বিশ্বের নীতি,’ যোগ করেন তিনি।
‘সরকার কোনো এলিট ক্লাব নয়’—মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, সরকার কোনো এলিট ক্লাব বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহিত করা হলে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিকামী জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যাংকিংখাত সংস্কারে এনডিএমের দেওয়া ২২ দফা সুপারিশের কথা উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই সুপারিশগুলো সময়োপযোগী, যৌক্তিক ও বাস্তবধর্মী মনে হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল এভাবে দল ও সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব পালনের জন্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে নিজেদের প্রস্তুত করে তোলে। দল জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। তাই বিরাজনীতিকরণ নয়, বরং দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান ও রীতিনীতিগুলোকে শক্তিশালী করা জরুরি। দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য গণতান্ত্রিক চর্চা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী, কূটনীতিক ও জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাসহ এনডিএমের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
নদীবন্দর/জেএস