1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
নদী দখল করে গড়ে উঠেছে বাজার, জলবায়ু ঝুঁকির ভার বইছে হাওরবাসী - Nadibandar.com
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
নদীবন্দর, সুনামগঞ্জ
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
  • ২ বার পঠিত

উন্নয়নের নামে নদীর বুকে গড়ে উঠছে দোকানঘর, বাজার আর স্থায়ী বাঁধ। একদিকে প্রভাবশালীদের দখল, অন্যদিকে প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা—দু’য়ের চাপে হাওরের নদী হারাচ্ছে স্বাভাবিক গতি, তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, রোগ ও জলবায়ু ঝুঁকি।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর বাজারে পাঠলাই নদী দখলের ঘটনা এখন স্থানীয়দের জন্য নিত্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে নির্মাণ হয়েছে বাজার। আর সেই বাজারে আছে অর্ধশত দোকান।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বরাদ্দে নদীতে বাঁধ দিয়ে প্রথমে সড়ক, পরে জমজমাট বাজার তৈরি হয়েছে। শিক্ষক রাজনীতিবিদসহ এসব দখলদারা নদীর জায়গা ভরাট করে প্রায় অর্ধশত দোকানঘর তৈরি করেছেন। বলছিলাম তাহিরপুর উপজেলার পাঠলাই নদীর কথা। যেখানে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জীবন্ত নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে করা হয়েছে বাজার।

২০০৬ সালের মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষার জন্য তাহিরপুরের পাঠলাই নদীর শাখা নদীর কালাগাঙ্গের উৎসমুখে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস)। এসব বাঁধ এমনভাবে নির্মাণ করার কথা যেন বর্ষায় বাঁধ ভেঙে নদীতে নৌকা চলাচল করতে পারে। তবে এই বাঁধটি শ্রীপুর বাজারে হওয়ায় দখলদাররা পরে আবারও মাটি দিয়ে উঁচু করে বাজার সম্প্রসারণ করে দোকানপাট নির্মাণ করে। এখন নদীর জায়গায় প্রায় অর্ধশত আধা পাকা দোকানঘর নির্মাণ হয়েছে। দখলদারদের মধ্যে স্থানীয় স্কুল শিক্ষকসহ প্রভাবশালীরা যুক্ত রয়েছেন।

দখলদাররা জানান, এটি নদীতে হলেও পরবর্তীতে তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ফলে তারা বছর মেয়াদী বন্দোবস্ত নিয়েছেন। অবশ্য বন্দোবস্ত নেওয়ার আগেই দোকানঘর তৈরি করেন তারা।

দখলদারদের মধ্যে জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমানের রয়েছে ৬টি ঘর, একই বিদ্যালয়ে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বড় একটি রাইস মিল, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শামনুর আখঞ্জির দুইটি ঘর, যুবলীগ নেতা ছবির মিয়ার একটি ঘর, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জিয়াউর রহমান আখঞ্জির দুইটি ঘর ও তার চাচা বিজিবি সদস্য আলী আজগরের ৩টি ঘরসহ স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদাররাও যুক্ত রয়েছেন।

শিকগ্রামপুরের বাসিন্দা আবুল লেইস বলেন, নদীর উৎসমুখে প্রভাবশালীরা ভরাট করে দোকানঘর বানিয়েছে। ফলে এখন মরা নদী হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বদ্ধ পানিতে গোসল করলে শরীরে চুলকানি হয়।

কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. ময়না মিয়া বললেন, ছোটবেলা থেকে দেখেছি এখানে একটি নদী ছিল। এক সময় নদীর এপার-ওপার মানুষের চলাচলের জন্য নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়। এতে শুষ্ক মৌসুমে কয়েকটি হাওরে জলাবদ্ধতা দেখা দিত। এখন হাওরের অন্য এলাকায় বাঁধ কেটে দিয়ে পানি নিষ্কাশন করতে হয়। এছাড়া বাজারের নৌকা ঘাট পর্যন্ত দখল করে দোকানঘর বানানো হয়েছে।

জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমান দখলের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কয়েক বছর আগে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বছর মেয়াদী বন্দোবস্ত নিয়েছি। প্রতিবছর এর খাজনা প্রদান করি।

একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্দোবস্ত নেওয়ার আগেই অনেকে পাকা ঘর তৈরি করেছেন। এজন্য আমিও পাকা ঘর করেছি। প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই ঘর বানানো হয়েছে।

উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি জিয়াউর রহমান আখঞ্জি বলেন, গ্রামবাসী মিলে নদীর মুখ ভরাট করে ঘর বানিয়েছে। পরে প্রশাসন থেকে বন্দোবস্তও নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নিজের দুইটি দোকানের মধ্যে একটিতে ব্যক্তিগত অফিস, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া তার চাচা বিজিবি সদস্য আলী আজগরের ২টি ঘর রয়েছে।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শামনুর আকঞ্জি বলেন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে নদীর উৎসমুখে বাঁধ দেওয়া হয়। পরে আমরা বাঁধের দু’পাশে মাটি ফেলে দোকানঘর তৈরি করেছি। এখানে আমার ২টি ঘর আছে।

সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজের (সিএনআরএস) তৎকালীন ফসল রক্ষা বাঁধের উপজেলা প্রজেক্ট অফিসার ইয়াহিয়া সাজ্জাদ বলেন, ২০০৬ সালে নদীর ওই জায়গায় মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষার জন্য অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর ২ বার বাঁধ ভেঙেছে। পরে স্থানীয়রা বিভিন্ন সময়ে সরকারি বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ী বাঁধ করেছে। নিজেরাও ভরাট করে দোকানঘর বানিয়েছে।

জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সুনামগঞ্জ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি মো. মোদাচ্ছির আলম বলেন, কালাগাঙ্গের শ্রীপুর বাজারে যে বাঁধটি রয়েছে, সেটি তখনকার সময়ে ফসল রক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল। এমতাবস্থায় উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএসের সহযোগিতায় মাটিয়ান- পাইল হাওরের ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড পিআইসির মাধ্যমে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করায় বাজারের স্থায়ী বাঁধটির আর প্রয়োজন নেই। এই বাঁধের কারণে পলিয়ার বিল, কদমতলীর বিল ও বেতাগড়া বিলের প্রায় ৫০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা হয়। ফলে ওই জমিতে আবাদ করা যাচ্ছে না। এছাড়া পৌষ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত মাটিয়ান, কদমতলী, মনতলা, শিবরামপুর, বেতাগড়া, উজ্জ্বলপুর, কালাশ্রীপুর ও তরং গ্রামের মানুষ নদীতে গোসল করতে পারে না। নদীর আবদ্ধ পানি দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগের প্রার্দুভাব বেড়েছে। নদীর মুখ বন্ধ হওয়ায় মাটিয়ান ও পালই হাওরের ধান, গবাদিপশুর খড় নদী পথে পরিবহন করা যায় না।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবুল হাসেম বলেন, শ্রীপুর বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এটি পাঠলাই নদীর তীরবর্তী ও সড়কের পাশে অবস্থিত। নদীর কোনো অংশ কেউ অবৈধভাবে দখল করে থাকলে আমরা তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনগতভাবে উচ্ছেদ করার ব্যবস্থা নেব।

নদীবন্দর/জেএস

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com