নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কয়েকটি বিষয়ে একমত হলেও বেশ কিছু সুপারিশের সঙ্গে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ঐকমত্যের ওপরে নির্ভরশীল বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
সোমবার (২৬ মে) জাতীয় সংসদ ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষে সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।
ঐকমত্য কমিশন জানায়, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে কিছু বিষয় সংবিধান সংশ্লিষ্ট বলে সেগুলো সংবিধান সংস্কার বিষয়ক আলোচনায় ঐকমত্যের ওপরে নির্ভরশীল। কিন্ত অনেক বিষয়ে নীতিগত ঐকমত্য বা আংশিক ঐকমত্য হয়েছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের যেসব বিষয়ে একমত বা আংশিক একমত-
১. নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করার ব্যাপারে সব দল একমত পোষণ করেছে।
২. দলনিরপেক্ষ, সৎ, যোগ্য ও স্বনামসম্পন্ন ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার বিধান করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ভবিষ্যতে সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি আলাদা স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গঠন করার ব্যাপারে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত। তবে এ ব্যাপারে মতের ভিন্নতা আছে।
৩. নির্বাচন কমিশনের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রস্তাব কোনো মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের স্পিকারের নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির নিকট উপস্থাপনের বিধান করার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো।
৪. সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কিংবা শপথ ভঙ্গ করলে কমিশনারদের মেয়াদ পরবর্তী সময়ে উত্থাপিত অভিযোগ প্রস্তাবিত সংসদীয় কমিটি তদন্ত করে সুপারিশসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর বিধান করার ব্যাপারে বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
৫. নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’-এর আওতাভুক্ত করার প্রস্তাবে বেশিরভাগ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
৬. মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বারিত করার লক্ষ্যে মানবতা বিরোধী (ট্রাইব্যুনাল) আইন ও আরপিও সংশোধন করার ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দলগুলো। এর আইনি দিক বিবেচনার জন্যে অধিকাংশ দল গুরুত্ব দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। পরবর্তীতে গত ৫ মার্চ ৫টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামত প্রদানের জন্য প্রেরণ করে। ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি।
নদীবন্দর/জেএস