ঈদুল আজহার ছুটিতে ফাঁকা হয়ে যাওয়া রাজধানীর ফাঁকা সড়কে আরও বেপরোয়া গতিতে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গণপরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও অফিসযাত্রী কমে যাওয়ায় সড়কে তুলনামূলকভাবে শৃঙ্খলা থাকার কথা থাকলেও, ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে এই বাহনের ক্ষেত্রে। অলিগলি ছাড়িয়ে এখন বড় বড় সড়কে আরও দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে অটোরিকশাগুলো। অধিকাংশ চালক ট্রাফিক আইন তোয়াক্কা না করে উল্টো পথে যাওয়া, বেপরোয়া গতি, যত্রতত্র থামা ও যাত্রী ওঠানামার মতো অনিয়ম করে যাচ্ছেন প্রকাশ্যে।
সড়কে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ, ঈদের ছুটিতে যানবাহন কম থাকায় অটোরিকশাচালকেরা মনে করছেন, পুরো রাস্তার দখল যেন তাদের হাতে। অনেকে প্রশিক্ষণ ছাড়াই চালাচ্ছেন এসব অটো। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্ট থাকলেও অটোরিকশাগুলো হুট করে অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে বা যানজট না থাকায় ধরা পড়ার সুযোগও কমে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, মিরপুর ও গাবতলী এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে অন্যান্য পরিবহন কম থাকলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। ঈদের আগের তুলনায় এই কয়েকদিনে এসব অটোরিকশার বেপরোয়া গতি, নিয়ম না মানা এবং রাস্তার মাঝেই যাত্রী উঠিয়ে নামানোর প্রবণতা বেড়েছে। ফলে স্বস্তিদায়ক সড়ক পরিস্থিতির মাঝেও অনেকেই হচ্ছেন ভোগান্তির শিকার।
বাড্ডা লিংক রোডের পথচারী ফিরোজ আহমেদ বলেন, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ একটা অটো উল্টো দিক থেকে এল। হর্নও দেয় না। এমনভাবে চালাচ্ছে যেন তারাই রাস্তার মালিক।
একই অভিযোগ করেন মগবাজার এলাকায় বসবাসকারী গৃহিণী শামীমা সুলতানা। তিনি বলেন, এদের চালানোর ধরন এতটাই বেপরোয়া যে আমরা সাধারণ রিকশায় থাকলে মনে হয় কখন কে এসে ধাক্কা মারে।
অটোরিকশাচালকেরাও স্বীকার করছেন, ঈদের এই সময়টাকে তারা বাড়তি আয় করার সুযোগ হিসেবে দেখেন। মগবাজার রেলগেট এলাকায় চালক সোহেল মিয়া বলেন, রাস্তা ফাঁকা, তাই গতি একটু বেশি থাকে। দিনে ২০-২৫টা ট্রিপ দিয়ে হাজার টাকার বেশি আয় করা যায়। তবে অনেক চালক ট্রাফিক সিগন্যাল মানে না, হুট করে থামে। এতে ঝুঁকি বাড়ে।
বাড্ডা লিংক রোডে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, এই বাহনগুলো বেশিরভাগই অবৈধ, অনেকের কোনো কাগজপত্র নেই। আমরা মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও ঈদের সময় লোকবল কম থাকে, ফলে প্রতিদিন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
সিটি করপোরেশন থেকেও এসব অটোরিকশার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনার কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো অনেকটাই এখন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলে বলেও অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন মহলে। ফলে আইন প্রয়োগ করতেও প্রশাসনকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
নদীবন্দর/জেএস