শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ২০টি স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে।
দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না পারলে রাস্তাঘাট, হাটবাজারসহ শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এতে চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন নদী তীরের বাসিন্দারা।
ভাঙন ঠেকাতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে নদীতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ।
এর আগে সোমবার বিকাল থেকে পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় ১০টি বসতবাড়ি ও ১০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরও অন্তত ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ২০১০-২০১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আর এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা।
২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। ১৬ নভেম্বর বিকাল পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে সিসি ব্লকগুলো তলিয়ে যায়। এ ছাড়া এলাকাটির আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।
পরে বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল, সেখানে দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ও সিসিব্লক ফেলা হয়। তবে এতে কোনো কাজ হয়নি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় মাঝির ঘাট এলাকার কুদ্দুস মাঝি, আমিরুল হক।
মাঝির ঘাট এলাকার বাসিন্দা হাসান মিয়া বলেন, “সোমবার দুপুরে নদীর অবস্থা স্বাভাবিক দেখেছি। বাড়ি গিয়ে খাওয়া-দাওয়া শেষে বিকালে মাইকে শুনি নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বিকালে নদী পাড়ে যাই। চোখের সামনে বাঁধসহ বেশকিছু বাড়িঘর বিলীন হতে দেখি। এখন আমরা কোথায় যাব।”
আরেক বাসিন্দা সোহাগ মাঝি বলেন, অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে পারেন নাই। মুহূর্তের মধ্যে নয়টি বসতঘর ও ১০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও একটি ভবন নদী গর্ভে চলে গেছে। কেউ কেউ ঘর-বাড়ির মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। এ ভাঙন কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানে না।
এলাকার বাসিন্দারা চরম ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “এখনও বর্ষার পানি বাড়ে নাই। তাতেই এমন ভাঙন শুরু হয়েছে। জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হোক। আমরা মালামাল সরিয়ে নিতে শ্রমিক পাচ্ছি না। অনেক বিপদের মধ্যে আছি। আমরা চাই এখানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ দেওয়া হোক।”
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “হঠাৎ ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ভাঙনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখলাম। বাঁধের বেশ কিছু অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে।”
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে, তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী শাজাহান সিরাজ বলেন, “ভাঙনের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। বেশকিছু ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। সোমবার কিছু জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। আজও ফেলা হচ্ছে।”
দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা।
নদীবন্দর/ইপিটি