দেশের ইতিহাসে ‘৩৬ জুলাই’ এক রক্তাক্ত, অথচ গৌরবময় দিন। এই দিনটিতে গণবিপ্লবের ঝড়ে পতন ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার। রাজপথে নেমে আসে কোটি মানুষ।
৩৬ জুলাইয়ের সকাল থেকেই গোটা দেশজুড়ে ছিল উত্তেজনা। রাজধানী ঢাকা ঘিরে কারফিউ জারি করা হয়। তবুও বাধা মানেনি মানুষ। রাজপথ ভরে যায় প্রতিবাদী জনতায়। তারা একটাই বার্তা দেয়, স্বৈরাচারের অবসান চাই।
সকাল থেকে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে জনস্রোত জড়ো হতে থাকে। ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে শুরু হয় বিশাল আন্দোলন। যদিও তখনো থেমে থাকেনি পুলিশ ও সরকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণ।
দুপুর গড়াতেই দৃশ্যপট বদলে যায়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণের ঘোষণা দেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসে উদ্দীপনায়।
বেলা আড়াইটার পর জানা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এরপর গণভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় জনগণ। বিজয়ের পতাকা উড়ে গণভবনের ছাদে। সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের উল্লাস।
সেদিন কেবল একটি সরকারের পতন হয়নি, জন্ম নিয়েছে একটি নতুন আশা ও সম্ভাবনার যাত্রা। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এই গণজাগরণ সময়ের সাথে রূপ নেয় শক্তিশালী অভ্যুত্থানে। শহীদ হয়েছেন হাজারো মানুষ। আহত হয়েছেন অগণিত। তাদের রক্তে লেখা হয় এই মুক্তির গল্প।
দেশের ইতিহাসে জুলাই ৩৬ দিনব্যাপী এক রক্তাক্ত মাস। এই মাসের প্রতিটি দিন ছিল সংগ্রাম ও ত্যাগের। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সমর্থনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায়। তবুও থেমে থাকেনি জনগণ। গুলির মুখেও রাজপথ ছাড়েননি তারা। শেষ পর্যন্ত, শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, কোটা সংস্কারের মতো ন্যায্য দাবি দমনে সরকার যে আগ্রাসন চালিয়েছিল, তাতে মানুষের ক্ষোভ ফেটে পড়ে। এটা ছিল দীর্ঘদিনের জমানো বেদনার বিস্ফোরণ।
অভ্যুত্থানের আরেক নেতা নাহিদ ইসলাম বলেন, এই গণজাগরণ ছিল জনমানুষের কৃতিত্ব। অংশগ্রহণকারীদের ঐক্য থাকলে আরও অনেক কিছু অর্জন করা যেত। একপর্যায়ে আমাদের রাজনীতিতে নামতে হয়েছে, কারণ আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে সাংগঠনিক ভিত্তি দরকার।
গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছাত্র-জনতার অন্তর্বর্তী সরকার বিশাল আয়োজন করেছে। আজ বিকেল ৫টায়, ‘গণ-অভ্যুত্থান’কে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস।
মানিক মিয়া এভিনিউতে থাকবে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক আয়োজন। স্মরণ করা হবে শহীদদের। আলোচনা হবে ‘২৪-এর ৩৬ জুলাই’-এর তাৎপর্য নিয়ে।
নদীবন্দর/ইপিটি