নেপালে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। এ কারণে দেশটির বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে লাল-সবুজের দলের আজকের অনুশীলনও স্থগিত করা হয়েছিল।
বাফুফে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নেপালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচকে সামনে রেখে আজ বেলা তিনটায় দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনুশীলন ছিল। তবে অনিবার্য কারণবশত অনুশীলন সেশনটি স্থগিত করা হয়েছে।
নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম প্রীতি ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। আগামীকাল সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা বাংলাদেশের।
সম্প্রতি নেপালে ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকার। এর প্রতিবাদে সোমবার সকালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হওয়া শন্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিক্ষোভ দমনে দেশটির পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান নিক্ষেপ করেছে। পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত ১৬ নিহত এবং শতাধিক বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেন বন্ধ হলো?
নেপালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৮ আগস্ট দেশটির মন্ত্রিসভা সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে সাত দিনের মধ্যে নিবন্ধন, কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে নিজেদের অফিস এবং একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা নিয়োগ করার নির্দেশ দেয়। এর জন্য ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
তবে অধিকাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরকারের এই নির্দেশ মানেনি। ফলে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, এক্স, রেডিট এবং লিংকডইনের মতো ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
বিক্ষোভের শুরু যেভাবে
শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তই এই বিক্ষোভের একক কারণ নয়, বহু তরুণ বিক্ষোভকারীর কাছে এই নিষেধাজ্ঞা ছিল সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জমে থাকা দীর্ঘ অসন্তোষের বিস্ফোরণ।
কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘হামি নেপাল’ নামে একটি সংগঠন সোমবার এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। এর জন্য অবশ্য তারা আগেই অনুমতি নেয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান সুধান গুরুং জানান, সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্নীতির প্রতিবাদেই এই কর্মসূচি এবং একই ধরনের আন্দোলন সারা দেশেই চলছে।
আয়োজকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিক্ষোভের রুট ও নিরাপত্তা নির্দেশনা জানান। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে বই হাতে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট বলেছে, নেপালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৩৬ লাখ। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন, প্রথমে তারাই বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা-বিরোধী আন্দোলন থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
কাঠমান্ডুর ২৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে আমাদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। আমরা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছি।’
ইক্ষামা তুমরোক নামের ২০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা সরকারের এমন আচরণ মেনে নিয়েছে। কিন্তু এটি আমাদের প্রজন্মের মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত।’
নদীবন্দর/জেএস