সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো যথাসময়ে মেরামত না করার ফলে প্রতিবছরই নানা মাত্রায় ফসলহানি ঘটে। পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কোনো কোনো বছর ফসলহানির পরিমাণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ ক্ষতি এড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রতিবছর শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধগুলো মেরামত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়।
এসব দিক লক্ষ রেখে এবছরও দ্রুত বাঁধ রক্ষা ও মেরামতের প্রস্তুতি শুরু করা প্ররয়োজন। হাওর এলাকায় খোঁজ নিতে দেখা গেছে, বাঁধের কাজের প্রকল্প নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগই এখন পর্যন্ত শুরু করা হয়নি। কথা ছিল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রকল্প নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করতে হবে। কিন্তু সেই তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর পর্যন্ত ১১টি উপজেলার কোনোটিতেই পিআইসি গঠন বা প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়নি।
অর্থাৎ ওই জেলার ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর নির্মাণ ও মেরামতের কাজ এবার যথাসময়ে শুরু ও শেষ করা যাবে না, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করতে হবে। কারণ মার্চে আগাম বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এপ্রিল থেকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কিন্তু দেখা যায়, প্রতিবছরই কাজ শুরু ও শেষ করতে দেরি হয়ে যায়। ফলে কাজ শেষ করার সময়সীমা বাড়ানো হয় এবং হাতে অল্প সময় থাকার কারণে তড়িঘড়ি কাজ শেষ করতে গিয়ে কাজের মান খারাপ হয়। বৃষ্টি বেশি হলে এবং তার সঙ্গে প্রবল পাহাড়ি ঢল যুক্ত হলে বাঁধের নিম্নমানের অংশগুলো দ্রুত ভেঙে গিয়ে ফসলের খেত প্লাবিত হয়।
এবার পিআইসি গঠনে দেরির কারণ হিসেবে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বক্তব্য হলো পরপর তিন দফায় বন্যার কারণে হাওর থেকে পানি নামছে ধীরে। ফলে বাঁধ নির্মাণের জন্য জরিপের কাজ শেষ হয়নি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে জরিপের কাজ শেষ করতে হবে। তারপর প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করা হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বলেছেন, যত সীমাবদ্ধতাই থাকুক না কেন, তাঁরা যথাসময়ে কাজ শুরু করতে চান। আমরা তাঁর এই বক্তব্যের সুফল দেখতে চাই। সেই সঙ্গে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সে জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। ফসলহানির পুনরাবৃত্তি অবশ্যই এড়াতে হবে।
নদী বন্দর/এআর