ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এরপরই ফিলিস্তিনি পরিবারগুলো তাদের ধ্বংসস্তুপে পরিনত হওয়া বাড়ির দিকে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।
আলজাজিরা জানিয়েছে, শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা) দিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী চুক্তি অনুযায়ী গাজার জনবহুল এলাকা থেকে সরে যায়।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যোখানে ইসরায়েলি ট্যাংক ও সামরিক যানগুলো গাজার বাইরে দিয়ে যেতে দেখা যায়।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির রূপরেখা অনুসারে নির্দিষ্ট এলাকায় অবস্থান নিয়েছে সৈন্যরা। তবে যেকোনো তাৎক্ষণিক হুমকি মোকাবিলায় অভিযান শুর করতে প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে উপকূলবর্তী সড়ক দিয়ে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজার দিকে দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক যাত্রা শুরু করেছে। অনেকে গাড়ি, ঘোড়াগাড়িতে যাত্রা করলেও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পায়ে হেঁটেই রওয়ানা দিয়েছেন।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ সমুদ্র ঘেঁষা আল-রশিদ সড়কে অপেক্ষা করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তারা এখানে অপেক্ষা করছিলেন। হামাসের বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা গাজার বাসিন্দাদের ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সীমান্তের কাছে না যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। ইসরায়েলি সেনারা যখন সরে গেছে তখন তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে নিজেদের বাড়ির দিকে যাওয়া শুরু করে।
অন্যদিকে জনবহুল এলাকা থেকে সরে যাওয়ায় পরও উপত্যকাটির ৫৩ শতাংশ অংশ এখনো ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে কথিত বাফার জোন। মূলত গাজা ও ইসরায়েল সীমান্তে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বাফার জোন তৈরি করেছে ইসরায়েল। সেখানে যত বাড়িঘর ছিল। তার সবই ধসিয়ে দিয়েছে দখলদাররা। এছাড়া ইসরায়েলি সেনারা আছে গাজা-মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডরে, উত্তরাঞ্চলের বেঈত হানুন, বেঈত লাহিয়া এবং রাফা ও দক্ষিণাঞ্চলের খান ইইনিসের বেশিরভাগ অংশে।
গাজার মানুষকে সতর্কতা দিয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তাদের সেনারা যেখানে আছেন সেখানে যেন কোনো বেসামরিক মানুষ না যান।
এরআগে বৃহস্পতিবার রাতে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় অনুমোদন দেয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ৭২ ঘন্টার কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে, যার মধ্যে হামাসকে ইসরায়েলি সকল জীবিত জিম্মিদের মুক্তি (২০ জন) এবং মৃত জিম্মিদের (২৮ জন) মরদেহ হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকবে। আগামী সোমবার দুপুর ১২টায় এই সময়সীমা শেষ হবে।
বিনিময়ে ইসরায়েলও তাদের কারাগার থেকে প্রায় ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যারা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। এছাড়া গাজা থেকে আটক আরও ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিও ছাড়া পাবেন ইসরায়েলি কারাগার থেকে। যদিও বন্দিদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে হামাসের জমা দেওয়া তালিকায় এমন সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ছিল, যারা প্রাণঘাতী জন্য একাধিক যাবজ্জীবন দণ্ড ভোগ করছেন।
তবে ইসরায়েলি মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন, সবচেয়ে পরিচিত বন্দিদের একজন, মারওয়ান বারঘুতি, এই আদান-প্রদানের আওতায় মুক্তি পাচ্ছেন না।
এছাড়াও ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষের বিনিময়ে ১৫ জন গাজাবাসীর মৃতদেহ ফেরত দেবে ইসরায়েল। একইসাথে, শত শত ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ শুরু করবে। পরিকল্পনায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ পাঠানোর কথা থাকলেও ফিলিস্তিনি সূত্র বলছে, শুরুতে দৈনিক অন্তত ৪০০ ট্রাক ত্রাণ ঢুকবে এবং পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে।
সূত্র: আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরায়েল
নদীবন্দর/এএস