1. badsha.dru@gmail.com : admi2017 :
  2. nadibandar2020@gmail.com : Nadi Bandar : Nadi Bandar
৪৮ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে সংসার চালান বৃদ্ধ সবুর মিয়া - Nadibandar.com
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ অপরাহ্ন
নদী বন্দর প্রতিনিধি:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৭ মার্চ, ২০২১
  • ১৪১ বার পঠিত

৪৮ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে সংসার চালান আব্দুস সবুর মিয়া। ১৭ বছর বয়সে অভাবের সংসারে বাবার কাজে সহযোগিতা শুরু করেন তিনি। ফলে স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তার। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের লালকুড়া গ্রামের মৃত তয়জুদ্দিনের ছেলে তিনি।

জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই বাবা তয়জুদ্দিন নিজ এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে লালকুড়া ঘাটে নৌকা চালাতেন। বিভিন্ন এলাকার মানুষের পারাপারের একমাত্র উপায় ছিল এই নৌকা ঘাট। এলাকার মানুষকে পারাপার করে যা পেতেন তা দিয়ে সংসার চলত তয়জুদ্দিনের। এতেও অভাব তার পিছু ছাড়ত না। ফলে প্রতিবছরে বয়ে যাওয়া ভয়াবহ বন্যায় মানুষজন নিয়ে গ্রামেগঞ্জে হাটে বাজারে পৌঁছে দিতেন। বয়সের ভারে নৌকা বাইতে সমস্যা হওয়ায় ১৭ বছর বয়সী ছেলে আব্দুস সবুরকে তার সহযোগিতা করার জন্য সাথে নেওয়া হয়।

সে সময় আশপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় পড়ালেখা করা হয়নি সবুরের। কিছু দিন পর বৃদ্ধ বাবা তয়জুদ্দিন বয়সের ভারে মারা যান। সংসারের ভার পড়ে যায় তার উপর। শুরু হয় তার জীবন যুদ্ধ। সংসারে মা, ভাই বোনদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটত তারা। দিন-রাত নৌকা চালিয়ে যা ভাড়া পান তাই দিয়ে তাদের ৬ সদস্যের সংসার চলত কোন মতে। কারণ সে সময় নৌকা ভাড়া ছিল ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত। মা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বর্তমানে আব্দুস সবুরের ঘরে রয়েছে ৬ মেয়ে ও ২ ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে শাহিন মিয়া ও বিলাল হোসেন বিয়ে করে পৃথক হয়েছেন। ফলে শেষ বয়সেও জীবিকা নির্বাহ করতে নৌকা চালাতে হচ্ছে তাকে।

বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই তার সংসারে। তবে একজন হাফেজিয়া মাদ্রাসা ছাত্রের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন আব্দুস সবুর। ভাগ্যের কি পরিহাস। নৌকা ঘাটটিও হাতছাড়া হয়ে যায়। গত বছর যাদুরচর নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময় লালকুড়া নৌকা ঘাটটি লিজ দিয়েছেন অন্যের কাছে। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি। একদিকে বয়সের ভারে শরীর অচল হয়েছে, অপর দিকে একমাত্র উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ৬৫ বছর পরেও হাল ছাড়েননি তিনি। বাঁচার তাগিদে নৌকা নিয়ে জিঞ্জিরাম নদীর এদিক-সেদিক চলতে থাকে। এরই মধ্যে যা পায় তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলছে তার।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হাজার হাজার শরণার্থীদের পাড় করে দিয়েছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রৌমারীতে প্রশিক্ষণ নিতে আসা মুক্তিবাহিনীদের এই নৌকা ঘাট দিয়েই পার করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদের বাক্সসহ বিভিন্ন মালামাল কাঁধে করে নদী পার করে দিতেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমাণাদি না থাকায় মুক্তিযোদ্ধার সনদ পাননি তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ পড়াদের অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দিলেও আব্দুস সবুর আবেদন করতে পারেননি। ইতোমধ্যে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে তার নামে বয়স্কভাতার নাম দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ জিও/এনজিও সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বলে আক্ষেপ করে বললেন তিনি।

বৃদ্ধ আব্দুস সবুর জানান, ১৭ বছর বয়স থেকে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। প্রমাণাদির অভাবে মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। শেষ বয়সে নৌকা চালাতে পারছি না। তবুও জীবন বাঁচাতে নৌকা চালাতে বাধ্য হচ্ছি। সরকারি বা বেসরকারি ভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেলে বাকি দিনটা হয়তো ভালোই যেত।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, নৌকা চালক অসহায় আব্দুস সবুর একটি লিখিত আবেদন দিলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

নদী বন্দর / এমকে

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2020 Nadibandar.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com