ক্রমাগত ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। সমুদ্রের স্রোতে প্রতিনিয়ত ভাঙছে পাড়, ছোট হচ্ছে আয়তন। আসছে বর্ষায় এ ভাঙন আরও তীব্র হওয়ার শঙ্কা স্থানীয়দের। তবে দ্বীপের অবকাঠামো ঠিক করে আধুনিক ব্লক স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। নীল পানি, মাছ আর প্রবালের মিতালীতে এই দ্বীপ বরাবরই আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে পর্যটকদের।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে দ্বীপটিতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। যার মাত্রা বেশি উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে। তাই সামনের বর্ষা মৌসুমে ভাঙন তীব্র হওয়ার শংকায় স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুম এলেই ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন রোধের জন্য জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল; তাও এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সামনে বর্ষা মৌসুম আসার আগেই যদি ভালভাবে জিও ব্যাগ দেওয়া না হয় তাহলে চারপাশে ভাঙন দেখা দেবে।’
নুর মোহাম্মদ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব সেন্টমার্টিন দ্বীপের চারপাশে টেকসই পরিবেশ বান্ধব বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা করা না হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে হারিয়ে ফেলব।’
১৯৯৪ সালের জলোচ্ছ্বাসের পর নানা উদ্যোগ নেওয়ায় এতদিন মোটামুটি নিরাপদ ছিল সেন্ট মার্টিন। কিন্তু সম্প্রতি দ্বীপের কোনো কোনো অংশে একশ’ থেকে দেড়শ’ ফুট পর্যন্ত সাগরে বিলীন হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহম্মদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভাঙন যদি অব্যাহত থাকে, ভাঙন রোধে সরকার যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে অচিরেই এই দ্বীপ বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সেন্টমার্টিন দ্বীপকে বাঁচাতে চারপাশে টেকসই বেড়িবাঁধের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।’
তবে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বঙ্গোপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ এই সেন্টমার্টিন দ্বীপকে টিকিয়ে রাখাটা জরুরি। তাই রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘গর্বের এবং পর্যটন ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে টিকিয়ে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত দুই বছর ধরে দেখছি দ্বীপের দক্ষিণ, উত্তর, উত্তর পূর্ব ও পশ্চিমে ভাঙছে।’
প্রবীর কুমার গোস্বামী আরও বলেন, ‘এই ভাঙন প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নের জন্য সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছি। এই প্রকল্পের আওতায় যেসব অংশে ভাঙন বিদ্যমান আছে; তার ভাঙন প্রতিরোধের জন্য টাইডেল ব্যারিয়ার নির্মাণ করা হবে। প্রাকৃতিক ভোল্টার ব্যবহার করে এটা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, প্রতি পর্যটন মৌসুমে নভেম্বর থেকে পাঁচ মাস সেন্ট মার্টিনে প্রতিদিন গড়ে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন।
নদী বন্দর / এমকে