নব্বই পরবর্তী বাংলা চলচ্চিত্রের সফল নায়িকাদের মধ্যে অন্যতম শাবনূর। স্নিগ্ধ চেহারা, মায়াবী হাসি, চিরায়ত বাঙালি নারীর মধুমাখা চাহনি আর প্রাণবন্ত অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি খুব দ্রুতই চলচ্চিত্রে স্থায়ী আসন করে নেন। একটা সময় ছিলো শাবনূর মানেই সুপারহিট চলচ্চিত্র। শাবনূর মানেই দর্শকের সেরা পছন্দ। ভালোবেসে অনেকেই তাই শাবনূরকে ঢাকাই ছবির রানী বলে ডাকেন।
বর্তমানে চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকলেও বাংলা চলচ্চিত্রে এখনো শাবনূর মানে দর্শকের কাছে বাড়তি উন্মাদনা, মাদকতা ছড়ানো প্রেম।
আজ এই লাস্যময়ী অভিনেত্রীর জন্মদিন। এবারে তিনি ৪১ বছর পূর্ণ করলেন। পা রেখেছেন ৪২ বছরে। জীবনের এই বিশেষ দিনটিতে ভক্তদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন তিনি।
পারিবারিক আয়োজনে অস্ট্রেলিয়াতে কাটছে শাবনূরের জন্মদিন। সঙ্গী একমাত্র পুত্র আইজান নিহান, বোন ও ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা।
১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন শাবনূর। তার পর্দার পেছনের নাম নূপুর। তার প্রথম চলচ্চিত্র কিংবদন্তি পরিচালক এহতেশামের ‘চাঁদনী রাতে’। ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর ছবিটি মুক্তি পায়। সাব্বিরের বিপরীতে অভিনীত চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়।
তবে শাবনূরের মুগ্ধতার ইতিহাস শুরু ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ ছবিটি দিয়ে। সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বেঁধে এই নায়িকা ১৪টি ছবি করেন। তার সবগুলোই রেকর্ড সংখ্যকভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য পায়। এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সফল জুটিগুলোর অন্যতম। বলা হয়ে থাকে সালমান-শাবনূর জুটি ইন্ডাস্ট্রির মিথ।
পরবর্তীতে এদের আদর্শ মেনেই এখানে নায়ক-নায়িকার জুটি গড়ে উঠেছে। তবে সালমানের যুগে ওমর সানী, অমিত হাসান, আমিন খান, বাপ্পারাজদের সঙ্গেও অভিনয় করে সফলতা পান শাবনূর।
সালমান মৃত্যু পরবর্তী সময়ে রিয়াজের সঙ্গে জুটি গড়ে আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের দেখা পান শাবনূর। রিয়াজের সঙ্গে প্রায় অর্ধশত চলচ্চিত্রে জুটি বাঁধেন তিনি এবং প্রায় সব ছবিই ছিলো ব্যবসায়িকভাবে সফল এবং আলোচিত। বলা হয়ে থাকে, রিয়াজ-শাবনূর জুটির পর ঢাকাই চলচ্চিত্রে সবশ্রেণির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় সুপারহিট আর কোনো জুটি আসেনি।
এই জুটির ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘এ বাঁধন যাবে না ছিড়ে’, ‘মন মানে না’ ইত্যাদি ছবিগুলো মাইলফলক হয়ে আছে এদেশীয় চলচ্চিত্রে ব্যবসায়িক সাফল্যের ইতিহাসে।তাদের বহু সিনেমা সুপারহিট হয়েছে। এছাড়াও ফেরদৌসের সঙ্গেও শাবনূর ছিলেন অনবদ্য। মান্নার সঙ্গেও কিছু ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন শাবনূর।
এ নায়িকার ক্যারিয়ারটি অনেক নায়কের জন্যও সৌভাগ্যের। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে উত্থান হয়েছে অনেকের। তাদের মধ্যে অন্যতম আজকের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। মূলত রিয়াজ, মান্না, ফেরদৌসদের স্বর্ণযুগে শাকিব নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছিলেন শাবনূরের শক্ত সমর্থনেই। তাই শাকিবের নায়ক হওয়ার গল্পের নায়িকাও বলা যায় শাবনূরকে।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে শাবনূরের আরও একটি বড় অর্জন ভক্ত-দর্শকের ভালোবাসা। পাশাপাশি অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘দুই নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার ও সর্বাধিক ১০বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার।
ব্যক্তি জীবনে ২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদের সঙ্গে শাবনূরের আংটি বদল হয় এবং ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে বিয়ে করেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন ও নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তিনি ছেলে সন্তানের মা হন। তার ছেলের নাম আইজান নিহান।
তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে জানা যায়, স্বামী অনিককে ডিভোর্স দিয়েছেন শাবনূর।
এদিকে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘এতো প্রেম এতো মায়া’ ছবিতে শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কথা দিয়েছিলেন শাবনূর। তারপর কেটে গেছে প্রায় চার বছর। কিন্তু সিনেমায় আর ফেরা হয়নি এই গুণি অভিনেত্রীর। অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়াসহ কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি অনেকদিন ধরে। সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠে তারপর আবার সিনেমায় আসবেন বলে গেল বছরের একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তিনি। সেজন্য নিজেকে ফিট করার মিশনেও নেমেছেন বলে জানা যায়।
নদী বন্দর / পিকে